৩ জন প্যারা শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:২৬ পিএম

জি এম মাছুম বিল্লাহ, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে: শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ১২২নং খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের চরম উদাসীনতার প্রমাণ মিলেছে বিদ্যালয়টিতে। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় গাবুরার খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় ছাত্র ছাত্রীদের হট্টগোল ও উশৃঙ্খল ছোটাছুটি। অন্য দিকে তিনটি শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করতে দেখা যায়। সাংবাদিক পরিচয় তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তাদের মধ্যে দুই জন প্যারা শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক বলে জানান।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অভিযোগ দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন না, অধিকাংশ সময় প্যারা শিক্ষক দিয়ে চলে স্কুলের কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন শ্যামনগর থাকেন। খোঁজখবর নিলেই বলেন বিদ্যালয়ের কাজে শিক্ষা অফিসে আছি। মাসে এক-দুইদিন স্কুলে আসেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক বুদ্ধদেবের কাছে প্রধান শিক্ষক সর্বশেষ কত তারিখে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ১৮ বছর একই বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকায় সহকারী শিক্ষকরা তাকে ভয় পান বলে জানান স্থানীয়রা। বিদ্যালয়টিতে চারজন শিক্ষক থাকলেও প্রধান শিক্ষক শ্যামনগরে থাকেন, সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন সাময়িক বরখাস্ত, অন্য সহকারী শিক্ষক মীরা বালা প্রশিক্ষণে আছেন ও অপর সহকারী শিক্ষক বুদ্ধদেব যোয়াদ্দার বিদ্যালয়ে অনিয়মিত।

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের এমন টালমাটাল অবস্থায় ধ্বংসের একেবারে দ্বারপ্রান্তে কোমলমতি শিশুদের জীবন। বিদ্যালয়টিতে যেমন কমেছে উপস্থিতির হার তেমনি ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির সংখ্যা কোন দেখে কৌতূহলবশত বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা দেখতেই চক্ষু চড়ক গাছ। তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ২০৮জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ৬০ শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে। যার মধ্যে হাজিরা খাতা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীতে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী থাকলেও ১৪ জন উপস্থিত, চতুর্থ শ্রেণীতে ৬৮ জনের স্থলে ১৯ জন এবং তৃতীয় শ্রেণীতে ৮০ জনের স্থলে ২৭ জন উপস্থিত রয়েছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি হাফেজ মাহমুদুল হাসান জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন জমিদান থেকে শুরু করে ম্যানেজিং কমিটিতে থেকে কাজ করেছি। বিগত কয়েকবছর যাবৎ বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে হতাশ হচ্ছি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন ম্যানেজিং কমিটি নেই, শিক্ষকও নেই। সরকারি প্রকল্পের টাকার বাস্তবায়ন নেই। প্রধান শিক্ষকের ইচ্ছে মত চলছে বিদ্যালয়টি।

অভিভাবক আবুল কালাম ও মরিয়ম বেগম জানান, স্কুলে বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটি নেই। শিক্ষক সংকট রয়েছে। অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের কোন সম্পর্ক নেই। হেড স্যার আসেন না। তিন জন প্যারা শিক্ষক দিয়ে নিজের কাজ সারেন।

গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার খান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে দেলোয়ার হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তার খামখেয়ালীপনায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এখনো ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কয়েকবার বসাবসী হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিজ মিঞা জানান, প্রধান শিক্ষক নিজে স্কুল না করে বেতনের টাকায় তিনজন প্যারা শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানোর বিষয়ে সত্যতা পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্যারা শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্যারা শিক্ষকদের টাকা দিয়ে রাখা যাবে, তবে এলাকাবাসী বা ম্যানেজিং কমিটি অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: