জগন্নাথের লিফট নাকি মরণ ফাঁদ!

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:১৫ পিএম

সানাউল্লাহ ফাহাদ, জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন একাডেমিক ভবনের লিফটে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে উঠা-নামা করে এই লিফট দিয়ে। প্রায়ই চলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে লিফট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার শঙ্কায় সবাই। ফলে রীতিমত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে লিফট।

গত সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) লিফটে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা লিফটের ভেতরে আটকে থাকার পর লিফট পরিচালনা দায়িত্বে থাকা মো. বেলাল হোসেন দ্রুত দরজা খুলতে সক্ষম হন। খোলার পর দেখা যায়, লিফটটি গ্রাউন্ডফ্লোর এবং সেকেন্ড ফ্লোরের মধ্যবর্তী জায়গায় আটকে আছে। এরপর আস্তে আস্তে লিফটে আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের চেয়ারের সাহায্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন তারা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনে রয়েছে মাত্র চারটি লিফট। এই ৪ লিফটেই প্রতিদিন উঠা-নামা করেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১টি লিফট শুধুমাত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে এবং বাকি ৩টি লিফট দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই উঠা-নামা করে থাকেন। তবে তিনটা লিফট বর্তমানে অকেজো অবস্থায় আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন ভবনের পুরোনো লিফটের জায়গায় নতুন আধুনিক মানের লিফট স্থাপনের কথা থাকলেও সেখানে নিম্নমানের ‘ক্লেমান’ কোম্পানীর লিফট ব্যবহার করা হয়েছে। ইউরোপীয় উন্নত কোম্পানীর ‘এ’ গ্রেডের লিফটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের মানের লিফট।

ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এই লিফ্ট ব্যবহার করে। অথচ বেশির ভাগ সময়ই নস্ট থাকে। আবার সচল থাকলেও নানারকম ভোগান্তি। এখন কি একজন দুজন আটকা পরে না মরলে প্রশাসনের হুস হবে না? একটা বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রশাসন এত জঘন্য কেম্নে হয় কে জানে। ছাত্র ছাত্রীদের জীবন নিয়েও এদের পরোয়ানা নাই।

লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একবার আমিও এভাবে আটকে পরছিলাম। তখন ফ্যানও ছিল না। অনেকক্ষণ আটকে থাকার পরে ঠিক এভাবে বের হয়েছিলাম। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র তিনটি লিফট যার দুটিই আবার অচল। আল্লাহ না করুক বড় কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নাহলে কোনো অঘটন ঘটে গেলে এর পুরো দায় নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে অপর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট, তাও আবার সপ্তাহের পর সপ্তাহ নষ্ট থাকে। কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। একে তো রাস্তার অতিরিক্ত জ্যাম তার উপর একবার সিরিয়ালি লিফটে উঠতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এসব ভোগান্তি তো কখনোই প্রশাসন দেখবেন না, বুঝবেও না। কারণ তাদের তো লিফটের সিরিয়ালে দাঁড়ানো লাগে না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সীমাহীন দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশালী ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। গতকালের বিষয়টা নিয়ে আমরাও খুবই চিন্তিত। দ্রুতই এটার সমাধান হবে আশা করছি।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: