মাইকের যন্ত্রাংশ চুরির অপবাদে পিতা-পুত্রকে পেটালেন উপজেলা চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:৪৮ পিএম

মসজিদের মাইকের যন্ত্রাংশ চুরির অপবাদের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ প্রতিবেশী ফরহাদ হোসেন (৫৩) ও তার ছেলে জামিউল আলীম জীবনকে (২০) মারপিট করে আহত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার সময় উপজেলার রামশারকাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে। আহত ফরহাদ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে আর জামিউল আলীম জীবন ফরহাদ হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে নলডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ এজাহার দাখিল করেন জামিউল আলম জীবনের মা জাহানারা বেগম। এজাহারে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামী করা হয়। অপর দুই আসামী হলেন ফয়সাল শাহ ফটিক ও আলিম আল রাজী।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রামশারকাজীপুর আমতলী বাজারে জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের ভিতর থেকে মাইকের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে শালিশী বৈঠক বসিয়ে সন্দেহ ভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ভয়ভীতি দেখায় ও শাসন গর্জন করে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে জোরপুর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ।

পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল আলিম জীবন নিজেকে নির্দোষ দাবী করে এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আসাদ। এরই জেরে গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জামিউল আলিম জীবনকে আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদসহ তার লোকজন তাকে ডেকে পাঠায়। এক পর্যায়ে তার সাথে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং জীবনকে কিল ঘুষিসহ মারপিট করতে থাকে। এসময় চেয়ারম্যান আসাদ বলতে থাকেন, 'আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার সাহস কিভাবে হল, এবার তোকে জানে মেরে ফেললে কোন বাপ বাঁচাবে?'

এ অবস্থায় তার বাবা ফরহাদ হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে ফরহাদ হোসেন মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। এসময় স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই এসএম ফকরুদ্দিন ফুটু জানান, তার ভাই ফরহাদ হোসেনের মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন আর ভাতিজা জামিউল আলিম জীবনকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। তাদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায় ভাবে তার ভাই ও ভাতিজাকে বেদম মারপিট করেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চান তিনি।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। যাতে এই ঘটনা নিয়ে আর কোন বিশৃংখলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরিবারের লোকজনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে আহত জীবনের মা জাহানারা বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে।

এব্যাপারে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি বা আমার লোকজন কাউকে মারেনি। ফেসবুকে লাইভে জামিউল ইসলাম জীবন আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপ্রচার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে জামিউল ও তার বাবা ফরহাদ হোসেন ও তাদের লোকজন আমার উপর হামলা করে। আমার মাথায় লাঠিসোটা দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমাকে বাঁচাতে আমার সমর্থক লোকজন এগিয়ে এসে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এতে তারা বাবা ও ছেলে আমাদের লোকজনদের বেদম পেটায়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: