কক্সবাজারে ৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিধবা ভাতা, অপেক্ষা বাড়ছে প্রত্যাশীদের

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২২ পিএম

কক্সবাজারের অধিকাংশ উপজেলায় বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড না পেয়ে প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদ ও সমাজসেবা অফিসে গিয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে অসংখ্য অসহায় মানুষকে। বিশেষ করে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া উপজেলায় বিগত তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতার জন্য আবেদনের সুযোগ। আর বাকী উপজেলাগুলোতেও বয়স্ক ভাতার আবেদনকারীদের ফিরতে হচ্ছে অনেকটাই শূন্য হাতে। জেলায় প্রতিবন্ধী ভাতার উল্লেখযোগ্য সংকট না থাকলেও শত শত বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীরা ভাতার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। যতই দিন যাচ্ছে এই সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। তিন বছর ধরে এই ভাতা বরাদ্দ না থাকায় ভাতার কার্ড প্রদান করা যাচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর।

ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য মতে, গত তিন বছরে ৬৬ হাজার ৩০৫ বয়স্ক ভাতাভোগী, ১৯ হাজার ২২ বিধবা স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতাভোগী এবং ১৮ হাজার ৭৩১ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী, সর্বমোট ১ লক্ষ ৫৮ জন ভাতাভোগী’র নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে, সকল ভাতাভোগীর ব্যাংক হিসেবে সরাসরি ভাতার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। ২৫ হাজার ৭৩০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সনাক্তকরণ সম্পন্ন করেছে। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা এবং অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের ডিজিটাল তথ্য ভান্ডার ইতোমধ্যে প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে গত তিন বছর ধরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের আবেদন বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি সেখানে। রয়েছে তথ্য ও কন্টেন্ট সংকটও। ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবাপ্রার্থীরা।

জানা যায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের পর এসব উপজেলায় আর কোন বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার বরাদ্দ আসেনি। সরকার ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১১২টি উপজেলা ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৫০টি উপজেলা শতভাগ বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার আওতায় আনলেও এই ২৬২ উপজেলার মধ্যে আসেনি উপকূলীয় এই তিন উপজেলা। এর ফলে ভাতা প্রত্যাশীদের অপেক্ষা বাড়ছে।

চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই উপজেলায় গত তিন বছর ধরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতার বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য ভাতার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ানো গেলেও বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা ভোগীর পরিমাণ স্থির রয়েছে প্রায় তিন বছর ধরে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেন জানান- আপাতত বিধবা ভাতার আবেদন নেওয়া হচ্ছে না। মূলত শতভাগ ভাতার আওতায় আনার জন্য সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। অচিরেই বিধবা ভাতার আবেদন চালু করা হবে।

বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর মনু জানান, ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড মেম্বারদের মাধ্যমে এবং আমার নিকট সরাসরি প্রতিদিনই বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার জন্য অসংখ্যা মানুষ আসেন, কিন্তু চকরিয়া উপজেলায় তিন বছর ধরে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতাভোগীর বরাদ্দ না থাকায় তাদের ভাতার কার্ড দিতে পারছি না। গত কিছুদিন আগেও আমার ১৮জন সুবিধাভোগীর কার্ড বাতিল করেছে। উপজেলা সমন্বয় সভায় বিধবা থেকে সধবা হয়েছেন কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন এমন সুবিধাভোগীর তথ্য জানতে চেয়েছেন। কিন্তু সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তালিকাই সরবরাহ করা হয়নি। তালিকায় কাদের কিভাবে রাখা হয়েছে তা যদি না জানি তাহলে সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে কিইবা তথ্য দিবো। এছাড়াও তাদের মাঠকর্মী রয়েছে তারা কিভাবে যাচাই বাছাই করছে সেটাও আমরা ঠিক মতো জানি না।

এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শফি উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড বরাদ্দ গত কয়েক বছর ধরে আসে না। তবে প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। আগে থেকে যারা ভাতার আওতায় ছিলো তারা নিয়মিত ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিধবা ভাতা প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে উর্ধ্বত্বন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার বরাদ্দ দিলে নতুন করে ভাতা কার্ড দেওয়া যাবে। শতভাগ ভাতার আওতায় আসলে ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত এমন সবাইকে ভাতা দিতে পারবো বলে আশা করছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: