তুমব্রু সীমান্তে ভয় চাপিয়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন

‘যখন বলা হয়েছিলো দুর্গোৎসব হবে না, তখন খুব খারাপ লেগেছিলো। মনে হয়েছিলো কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উৎসবের আয়োজন আনন্দে মন ভরে গেছে।’ কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন তুমব্রু মন্দিরের পাশের প্রদীপ কর্মকার।
জানা গেছে, দীর্ঘ দেড় মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের লাগাতার গোলাগুলি চলছে। এতে সীমান্তের বাংলাদেশি অধিবাসীরা চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছে। তাই সীমান্তের একেবারে কাছের তুমব্রুর হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসব আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিলো। এই নিয়ে প্রশাসন ও দুর্গোৎসব আয়োজনকারীরা দ্বিধাদ্বন্দে পড়েছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত লাগাতার গোলাগুলির ভয় উপেক্ষা করে দুর্গোৎসব করা হচ্ছে। রোববার থেকে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে।
তুমব্রু শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রূপলা ধর জানিয়েছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলের দাবির প্রেক্ষিতে মন্দির প্রাঙ্গণেই দুর্গোৎসব আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রশাসন পূজার স্থান অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার লোকজন তাতে তেমন একটা সায় দেয়নি। তবে কয়েকদিন ধরে গোলাগুলি কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মন্দির প্রাঙ্গনেই দুর্গোৎসব আয়োজন করা হলো। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থেকে মাত্র ২০০ গজের মধ্যে তুমব্রু শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির। পাশেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৭টি পরিবারের বসবাস। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে প্রতি বছর এই মন্দিরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয়রা। কিন্তু মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর দেড় মাস ধরে চলা সংঘর্ষ এবার পূজা আয়োজনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে ভয় উপেক্ষা করে অবশেষে দুর্গোৎসব আয়োজন করা হলো। এতে বেশ উৎফুল্ল স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন।
সুগন্ধা রায় বলেন, ‘সুগন্ধা কর্মকার, বাচ্চারা অনেক আগে থেকে দুর্গোৎসবের দিকে চেয়েছিলেন। তাই আগেই তাদের জন্য সন্তানদের জন্য কেনাকাটা করা হয়েছে। উৎসব হবে না শুনে বাচ্চা কান্নাকাটি করছিলো। তবে আয়োজন হওয়ায় তারা এখন খুশিতে আত্মহারা।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য দীল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, গোলাগুলির পরিস্থিতি কিছুটা কমায় দুর্গোৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। মূলত সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন চেয়েছেন উৎসব হোক। তাই ঝুঁকি নিয়েও উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু বাজার শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির। তার পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৭টি পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষের বসবাস এই মন্দির ঘিরে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের আগ্রহের প্রেক্ষিতে প্রশাসন দূর্গোৎসের অনুমতি দিয়েছে। তবে সীমাবদ্ধতা দেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক সজাগ থাকাসহ নিরাপত্তা সংকট তৈরি হলে দ্রুত সময়ের উৎসব বন্ধ করে পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, তুমব্রু সীমান্তের মন্দিরে দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে দূর্গোৎসবের অনুমতি দেয়া হয়েছে। একই সাথে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: