পর্যটন শিল্পে অপর সম্ভাবনা থাকলেও কোন কাজ হয়নি

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৪৮ পিএম

জি এম মাছুম বিল্লাহ, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে: সড়কপথে সুন্দরবন সাতক্ষীরার আকর্ষণ। সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পে অপর সম্ভাবনা থাকলেও কোন কাজই হয়নি। সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি পর্যটন কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এই এলাকাটি হতে পারে পর্যটন শিল্পের একটি নিদর্শন। শুধুমাত্র সড়ক পথেই সুন্দরবন উপভোগ করা যায় বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের এই জেলায়।

শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে সুন্দরবন দেখা গেলেও মূলত মুন্সীগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী পর্যটকদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। মুন্সিগঞ্জ থেকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ শুরু হওয়ায় লোকালয় থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটন শিল্পের অপর সম্ভাবনার জায়গা মান্দারবাড়িয়া সুমদ্র সৈকত। এছাড়া কলাগাছিয়া, দোবেকি, কটকা, কচিখালি, বঙ্গবন্ধুর চর, হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চরে খুব সহজেই যেতে পারেন পর্যটকরা। মুন্সিগঞ্জ থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাধ্যমে যাওয়া যায় এই দর্শনীয় স্থানগুলোতে। এত বেশি সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যটন কর্পোরেশন থেকে এখনো পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো কোনো কাজই হয়নি এই এলাকায়। অথচ এই সম্ভাবনাময় খাতকে রাখা হয়েছে শিল্পের পর্যায়ে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন,পর্যটন শিক্ষাকে বিকশিত করে ও মানুষের আত্মিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যটন দেশের অর্থনৈতিক বিকাশেও জোরদার ভূমিকা রাখে। বুড়িগোয়ালিনীকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার আহ্বান জানান।

সুশীলনের নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান বলেন, সুন্দরবনকে ঘিরে আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। প্রথমত এই এলাকাকে টুরিস্ট জোন হিসেবে ঘোষণার পরপরই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর সমন্বয়ে দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান তৈরি করা। যাতায়াত ও সুন্দরবন ভ্রমণ সহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে এই এলাকা হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম একটি বিনোদনের স্থান।

১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই দিবস পালিত হচ্ছে।২০২০ সাল থেকে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্প এক বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত খাত হিসেবে অনিশ্চয়তার সামনে দাঁড়িয়ে এই শিল্প।করোনা মহামারির শুরু থেকে বিদেশি পর্যটকরা যেমন আসেননি, তেমনই দেশের অনেক পর্যটনকেন্দ্রেও এখনও তেমন ভিড় জমেনি। তবে অবস্থার নেতিবাচকতা ধীরে ধীরে হলেও আবার আগের ইতিবাচকতায় ফিরেছে বর্তমানে স্বল্প পরিসরে কিছু পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।অন্যান্য বছর করোনা মহামারির কারণে শুধু অনলাইনে আলোচনার সীমাবদ্ধ থাকলেও এবছর দিবসটি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হবে এমনটাই আশা করছেন পর্যটন শিল্পের কর্ণধাররা।

সাতক্ষীরা টুরিস্ট জনের ইনচার্জ মহসিন আলম বলেন পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য টুরিস্ট পুলিশ সদা সর্বদা নিয়োজিত। অতীতে কিছু পর্যটক হয়রানি হলেও বর্তমানে সেটি শূন্যের কোঠায়।

পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নুর আলম বলেন, পর্যটকদের সুন্দরবনকে আকৃষ্ট করতে পর্যটন স্পটগুলো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। কলা গাছিয়াতে কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র তৈরীর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে করমজল থেকে তিনটি কুমির আনা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকরা যাতে হরিণ দেখতে পায় সেজন্য হরিণের শেড তৈরি করার কাজ চলমান। সিপিজির সহযোগিতায় কলাগাছিয়াতে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট একটি স্টল স্থাপন করা হবে। স্টলটিতে সুন্দরবনের মধু, কেওড়ার আচার,গোলফল ও মোম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জামাদি থাকবে। টুরিস্ট যাতে স্বাচ্ছন্দে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারে সেজন্য বন বিভাগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তিনি আরো বলেন, গতবছর সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ৫০জন বিদেশি ও ৫১৪৮০জন দেশি পর্যটক। রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮৫৭০৮০টাকা

শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, সুন্দরবনকে সামনে রেখে এলাকাটিকে পর্যটন জোনের জন্য খুব চেষ্টা করছি। পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা থাকা-খাওয়া গাড়ি পার্কিং সহ বিভিন্ন সুবিধার জন্য সরকারী ভাবে মটেল তৈরির পরিকল্পনা করে ইতিমধ্যে সেটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। তিনি আরো বলেন, পর্যটকদের জেলা শহর থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত আসতে যে রাস্তাটি ব্যাবহার করে সেটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, পর্যটনকে সম্প্রসারণ করার জন্য প্রচার প্রচারণা অব্যাহত আছে। অযথা কোন পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য উপজেলার দর্শনীয় স্থান গুলোতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সার্বক্ষণিক মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে।উপজেলা প্রশাসন থেকে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজমকে আরো সম্প্রসারিত করারও পরিকল্পনা আছে। পরিবেশ ধ্বংস না করে পরিবেশের প্রতি সহনশীল হয়ে পর্যটকরা যেন ভ্রমণ করতে পারে পর্যটন দিবস হিসেবে সাধারণ পর্যটকদের মধ্যে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছি।

সাতক্ষীরা চার আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলেন, সুন্দরবন শুধু শ্যামনগরের গর্ব নয়, এটি বাংলাদেশের একটি গর্ব। শ্যামনগর ও সুন্দরবনকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে মহান জাতীয় সংসদে তুলে ধরা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা ও সুন্দরবনকে নিয়ে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেটার বাস্তবায়ন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: