বগুড়ায় বিয়ের ৬মাস পর গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী আটক

প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২২, ১০:৩৮ পিএম

ভালবেসে বিয়ের ছয়মাস পর বগুড়ার আদমদীঘিতে সৈয়দা সারাহ্ আহমেদ প্রিয়াসা (২৩) নামে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা সদরের ডহরপুর গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরআগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রিয়াসার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। প্রিয়াসা ওই গ্রামের নাসরুল্লাহ হক ঐক্যের (২৮) স্ত্রী। ঘটনার পর আদমদীঘি রহিম উদ্দীন ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক আনোয়ারুল হক পল্টুর ছেলে নাসরুল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ। প্রিয়াসা নওগাঁ শহরের মাস্টার পাড়া মহল্লার জসিম উদ্দিনের মেয়ে।

নিহতের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নাসরুল্লাহ হক ঐক্যের সাথে সৈয়দা সারাহ্ আহমেদ প্রিয়াসার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ সুবাদে গত ১০ মার্চ কৌশলে প্রিয়াসাকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে করেন নাসরুল্লাহ। বিয়ের পর থেকে তাকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন নাসরুল্লাহ। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যেও মনোমালিন্য চলে আসছিল। সর্বশেষ গত শনিবার বিকেলে প্রিয়াসার তার শয়ন ঘরের ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুঁলানো অবস্থায় দেখতে পায় পরিবারের লোকজন। প্রিয়াসার শশুর বাড়ির সদস্যের দাবি, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন প্রিয়াসা। কিন্তু প্রিয়াসার মা, ভাই ও বোনের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রিয়াসার বড় বোন শারমিন আক্তার লাবনি ও ভাই সৈয়দ আদনান বলেন, নাসরুল্লাহর সাথে প্রিয়াসার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে বোন জানতে পারে নাসরুল্লাহ মাদকাসক্ত। এ কারণে বোন তাকে বিয়ে করতে চাইতো না। গত ১০ মার্চ দুপুরে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে বোনকে ডেকে নেয় নাসরুল্লাহ ও তার বাবা আনোয়ারুল হক। পরে সেদিনই তাদের বাড়িতেই বোনকে বিয়ে করে। বিয়ের পর ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। মারা যাওয়ার আগের রাতেও বোনের সঙ্গে কথা হয়েছে সে খুব কষ্টের মধ্যে আছে। বোন আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

নাসরুল্লাহ হক ঐক্যের মা খন্দকার নিসাত বলেন, ছেলের বন্ধু বেড়াতে আসছে। বিকেলে তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য স্টেশনে যাবে। কিন্তু ছেলের বউ তাকে স্টেশনে না যেতে বার বার নিষেধ করাও পরও যায়। সেসময় বাড়িতে আমি ও ছেলের বাবা আনোয়ারুল হক এবং ছেলের বউ প্রিয়াসা ছিল। বউ তার ঘরেই ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খাওয়ার জন্য অনেক ডাকাডাকি করা হয়। কিন্ত ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানালা দিয়ে দেখি প্রিয়াসা ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুঁলে আছে। ফ্যান থেকে নামিয়ে ওড়না কেটে চোখমুখে পানি ছিটানো হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে থানায় সংবাদ দেওয়া হলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, সংবাদ পাওয়ার পর শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। মৃত্যু রহস্যজনক হওয়ায় গৃহবধূর স্বামী নাসরুল্লাহ হক ঐক্যেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। রোববার দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: