পীরগাছায় এক সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ৩ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে পাঠদান

প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১০:৪০ পিএম

রংপুরের পীরগাছায় তাম্বুলপুর মাস্টারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে পাঠদান। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যালযে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদসংখ্যা ৫, কর্মরত ৪ জন। শিক্ষার্থী পাওয় যায় ৩ জন। তৃতীয় শ্রেণিতে ২ ও ৪র্থ শ্রেণিতে ১ জন শিক্ষার্থী। ৫ম শ্রেণি কক্ষে তালা ঝুলছে। সংবাদ প্রতিনিধি ওই বিদ্যালয়ে আসার খবরে বিদ্যালয়ের নিকটতম প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানাজানি হলে প্রায় দুই/আড়াইশ নারী-পুরুষ আকস্মিকভাবে বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষক মহসিন আলীর অপসারণের দাবি করেন।

তারা বলেন, মাস্টারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে সার্বক্ষনিক খারাপ আচরন করেন। ৫ম শ্রেণি পাশের পর শিক্ষার্থীদের নিকট হতে প্রতায়নের জন্য ২৫০/৩০০ টাকা নেন এবং করোনা ভ্যাকসিনের জন্য প্রত্যয়নে তিনি ১০০/১৫০ টাকা করে নিয়েছেন। তিনি বিদ্যালয়ের ইট খোয়া, বড় বড় ইউক্লিপ্টার্স গাছ বিক্রি এবং চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ দরজা ও জানালা তার বাড়ীতে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিলীপ চন্দ্র বর্মন বলেন আমার সহি স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক স্লিপ, প্রাক-প্রাথমিকসহ যে কোন ধরনের বিল উত্তোলন করেন। তিনি আরও বলেন, আমি এটিও শামসুজ্জামানকে স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি বললে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করে আমাকে বলেন সামনে কোন বরাদ্দ আসলে আপনার স্বাক্ষর নিতে বলবো।

সহকারি শিক্ষক রওশন জামিল বলেন, আমরা হোম ভিজিটে গেলে অভিভাবকরা বলেন, মহসিন মাস্টার যতদিন ওই স্কুলে থাকবে ততদিন আমরা আমাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনিকে দেব না। তিনি আরও বলেন, আমরা সারাদিনে শুধুমাত্র হাজিরা খাতা স্বাক্ষরের জন্য একবার অফিসে প্রবেশ করি। শিক্ষার্থীদের জন্য জেল বন্দি জীবন হওয়ায় আমাদের প্রতিবেশীদের ছেলে মেয়েরা প্রায় দুই/আড়াই কিলো.মি দুরের বিদ্যালয়ে যায়। ৫০ জন শিক্ষার্থীর নামে উপবৃত্তি দেয়া হলেও বাস্তবে অত শিক্ষার্থী নেই। গত কাল অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর আমরা ৪ জন শিক্ষক ২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সারাদিন ছিলাম। ওই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্যদের মধ্যে রুস্তম আলী বলেন, মহসিন মাস্টার দীর্ঘ দিন থেকে পকেট কমিটি করে আসছেন। চলমান কমিটিও পকেট কমিটি করার পাঁয়তারা করছেন।

সাবেক সভাপতি আজিজুল ইসলাম বলেন, স্লিপের টাকা দিয়ে মোবাইল কেনেন এই মহসিন মাস্টার আর বলেন অফিসারদের সাথে কথা বলতে হয় এইজন্য আমাদেরকে মোবাইল কিনতে বলেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন উদ্যোগ এই বিদ্যালয়ের পড়া লেখার মান ফিরিয়ে আনার। সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক তথ্য বিবরনীতে দেখা যায় গত ২ মাস সর্বশেষ পরিদর্শন করেন ওই বিদ্যালয়টি।

কয়েকজন অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকরা স্কুলে আসেন আর যান, মাস শেষে মাইনা নেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেন না স্কুলে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি প্রধান শিক্ষক নিজের ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করেন, স্থানীয় সাধারন মানুষ, অভিভাবক কাউকেই তিনি মূল্যায়ন করেন না। শিক্ষার্থীদেরকে খেলা ধুলার সুযোগ দেন না, ছাত্র/ছাত্রীরা স্কুলে আসলে তাদেরকে শ্রেণি কক্ষ হতে বের হইতে দেন না, এ যেন মনে হয় জেল বন্দি জীবন।

সহকারি শিক্ষক রওশন জামিল বলেন, আমরা শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে গেলে অভিভাবকরা বলেন, মহসিন মাস্টার যতদিন ওই স্কুলে থাকবে ততদিন আমরা আমাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনিকে ভর্তি করাবো না।

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য রুস্তম আলী বলেন, মহসিন মাস্টার দীর্ঘদিন থেকে পকেট কমিটি করে আসছেন। চলমান কমিটিও পকেট কমিটি করার পাঁয়তারা করছেন।

প্রধান শিক্ষক মহসিন আলী বলেন, আমার বিদ্যালয়ের নামে যে কোন ধরনের বরাদ্দের শতকরা ১০ টাকা দিতে হয় আমার এটিও শামসুজ্জামানকে। তাহলে আমি কাজ করব কিভাবে? তিনি আরও বলেন, আমার বিদ্যালয়ের পাশে কয়েকটি এনজিও স্কুল হওয়ায় ছাত্র সংখ্যা কমে গেছে।

সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জামান শতকরা ১০ টাকা নেয়ার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে বলেন, আমি নিজেও স্কুল পরিদর্শন করেছি, অভিভাবক ও সুধি সমাবেশের কথা বলে এসেছি, সবার কাছে শুনে প্রয়োজনে মহসিন মাস্টারকে বদলি করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, প্রধান শিক্ষক মহসিন আলীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: