বেড়েছে বেওয়ারিশ ও পাগলা কুকুরের উপদ্রব, কামড়ে মরছে গরু-ছাগল

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২২, ১০:০৬ পিএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে বেড়েছে বেওয়ারিশ ও পাগলা কুকুরের উপদ্রব। এতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, জেলার গোমাস্তাপুর ইউনিয়নের দোসিমানি কাঁঠাল, গোপালনগর, গুচ্ছগ্ৰাম ও জাহিদনগর এলাকায় শতাধিক পাগলা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর বাড়ির আশে পাশে বেঁধে রাখা গরু-ছাগলকে কামড় দিচ্ছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ওই গ্রামগুলোতে।

এদিকে গত মাস থেকে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে পশু জলাতঙ্ক রোগ। এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বেশ কিছু গরু ও ছাগল। কিন্তু এই রোগের ভ্যাকসিন নেই গোমস্তাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে। তাই মারা যাচ্ছে গরু। এছাড়াও বাইরে ভ্যাকসিন কিনলেও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিতে বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার অভাবে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু ও ছাগল।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শাজাহান বলেন, গত ৮ মাস আগে ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে ও রাজমিস্ত্রীর কাজ করে একটি গরু কিনেছিলাম। গরুটি গর্ভবতীও হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে পাগলা কুকুরের কামড়ে আমার একটি গর্ভবতী গাভি মারা গেছে। গাভিটির ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের। এখন আমি ঋণের টাকা কোথায় পাব? তাই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছি।

দোষীমানি কাঁঠাল কামার মোড় গ্ৰামের রাজিব আলী বলেন, বেশকিছু দিন আগে বাড়ির আঙিনায় খুঁটিতে বাঁধা ছিল আমার একটি গরু। বিকেল বেলায় হঠাৎ ৩-৪টি কুকুর গরুটিকে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের কাছে অনেক ঝাড়, ফুঁক দিয়েও ভালো হয়নি। তাই গরুটি মারা গেছে। স্থানীয় পশু হাসপাতালকে জানালে। তারা এসে গরুটির মাথা কেটে নমুনা সংগ্রাহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে। কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে আমি ফের গরু কিনতে পাবর।

ফিটু নামে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গত এক মাস আগে আমার দুইটি ছাগলকে কুকুরে কামড় দিয়েছিল। একটি মারা গেছে। আর একটি ছাগলের চিকিৎসা চলছে।

দোসিমানি কাঁঠাল গ্ৰামের বাসিন্দা মোসা: ফুলবতি নামে আরও এক নারী বলেন, কিছুদিন আগে আমার বসত বাড়ির উঠানে বাঁধা থাকা গরুকে কুকুরে কামড় দেয়। পরে এলাকার কবিরাজ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করিয়েছে। কিন্তু ঘটনার ২১ দিন পর গরুটি মারা গেছে। আমার শেষ সম্বল ছিল গরুটি। এখন আমার ভবিষ্যত অনিশ্চিত। আমার এক সন্তান আছে সেও প্রতিবন্ধী।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. কাওসার আলী বলেন, উপজেলায় বেশ কিছুদিন আগে কুকুরের কামড়ে কিছু গরু ছাগল আসতো। কিন্তু এখন মসজিদে মসজিদে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ফলে ১৫-২০ দিন থেকে আর সেরকম কেস আসছে না। আগে দুই একটা করে কুকুরের কামড়ের গরু ছাগল আসতো। আর কুকুরের কামড়ে যে গরুগুলো মারা গেছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫টি গরুর মাথা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ গরু খামারিদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা: মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কুকুর মারা এখন নিষিদ্ধ। "বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২" অনুসারে কোন কুকুর মারা বা নিধন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে কুকুর যদি গরু-ছাগলকে কামড় দেয়। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ১৫-২০ মিনিট কাপড় কাঁচা সাবান ও সোডার ক্ষরণী দিয়ে ধোত করতে হবে। আর গোমস্তাপুরে কয়টা গরু মারা গেছে তার সঠিক সংখ্যা আমার জানা নেই। এ সময়ে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একটু বেশী সর্তক থাকতে হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: