বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের পানি পানের কুয়া

বর্তমানে সুপেয় পানি পানের জন্য আধুনিক বহুমূখি ব্যবস্থা থাকলেও এক সময় কুয়া বা ইদারাই ছিল পানযোগ্য পানি পাওয়ার একমাত্র ভরসা। গ্রামীণ ঐতিহ্যের এইসব কুয়া এখন প্রয়োজনহীন হয়ে পড়ায় তা এখন একেবারেই বিলুপ্তির পথে। অথচ এই কুয়া বা ইদারাই এক সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পানি পানের কার্যকরি মাধ্যম ছিল গ্রামের সবার কাছে। কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই কুয়া বা ইদারা নতুন প্রজন্মের কাছে এখন একেবারে অচেনা। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অন্তর্জালে হাজারো রকম বিনোদনের ভিড়ে কখনো চোখেই দেখেনি দড়ি দিয়ে মাটির গভীর থেকে পানি টেনে তোলার অপরূপ দৃশ্য। আজকাল হয়তো আর কেউ সেসব গল্পও শোনেনা গ্রামের শ্যামল রমণীরা পানির জন্য কুয়ার পাশে কিভাবে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতো।
প্রয়োজন হারানোয় হাজার বছর ধরে মানুষের তৃষ্ণা মিটিয়ে আসা বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান এই কুয়া মানুষের স্মৃতি থেকেও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবুও কেউ কেউ এখনো স্মৃতি হাতরে সেই আগের দিনের ধ্যান ধারণা আকরে ধরে শল্য চিকিৎসা অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে খুজতে যান দূরের কোন গ্রামে কুয়োর পানি। কুয়া পাওয়া দুষ্কর হলেও এখনো পুরাতন মানুষেরা মনে করেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানির আঁধার হলো কুয়া। হয়তো এরকম কিছু মানুষের প্রয়োজনেই কালের স্বাক্ষী হয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কোথাও কোথাও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে বুকের উপর উঁচু করে ধরে আছে কয়েকটি কুয়া। তবুও হাতেগোনা যে কয়টি কুয়া উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে চোখে পড়ে সেগুলোও অকেজো হয়ে আছে সংস্কারের অভাবে।
শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের কাদাই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, একসময় মানুষ সুপেয় পানি পানের অভাব বোধ থেকে এই অঞ্চলে খনন করতো গভীর কুয়া বা ইদারা। গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে, এখন তা কেবল স্মৃতি। তাছাড়া এখন তো বাড়ি বাড়ি কুয়ার বদলে দেখতে পাওয়া যায় টিউবওয়েল অথবা সাবমার্সেবল মটর। কিছুদিন আগে যে বাড়িতে কুয়া ছিল সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে। তবুও আমাদের বেলতৈল ইউনিয়নের রাজবাড়িতে দুইটি কুয়া রয়েছে কালের স্বাক্ষী বহন করে। এখনো মানুষ এই কুয়ার পানি ব্যবহার করে। যদিও কুয়া দুইটি আর মানুষের তেমন কোন কাজে আসে না তবুও নতুন প্রজন্মের কাছে কুয়া দুইটি ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষ দিচ্ছে।
পোতাজিয়া ইউনিয়নের ভাইমারা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, তাদের গ্রামের মসজিদে রয়েছে একটি কুয়া। বহুকাল আগে গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির প্রয়োজনে কুয়াটি নির্মাণ করা হলেও এখন তা ঝুকিপূর্ণ মনে করে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে তিনি শাহজাদপুর পৌর শহরের মণিরামপুর ঢোলভিটা মহল্লায় একটি সচল কুয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এখনো এই কুয়া থেকে সুপেয় পানি ওঠে। বুহু দূরের মানুষ চিকিৎসা এবং মানতের জন্য এই কুয়া থেকে পানি নিয়ে যায়।
তথ্যমতে শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর মহল্লার মওলানা ছাইফ উদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজের পশ্চিমে কৃষি জমির মাঠের মধ্যে একটি কুয়া অকেজো হয়ে পড়ে আছে প্রায় তিন যুগ ধরে। এছাড়াও উপজেলার বাড়াবিল মধ্যপাড়া গ্রামে একটি, নরিনা ইউনিয়নের টেটিয়ারকান্দা গ্রামে দুইটি, কায়েমপুর ইউনিয়নে একটি ,পাড়কোলা গ্রামে একটি কুয়া কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। সংস্কার না করলে যে কয়টি কুয়া আছে এখনো সেগুলোও একদিন হারিয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা কদবানু খোতুনের সাথে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে অতীতের নানা স্মৃতিচারণ করে জানান, অন্তত ১০ থেকে ১৫ ফুট গোল গর্ত করে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর মাটি খুড়ে বালু বের করে এইসব কুপ বা ইদারা তৈরি করা হত।
আবার পাতি কুপ ও ইঁদারার মধ্যে পার্থক্য করে তিনি আরও বলেন, ইঁদারা আসলে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত ইট বা রিং( সিমেন্ট বালি দিয়ে তৈরি গোল কাঠামো) দিয়ে বাঁধাই করা হত আর পাতি কুপ কোন প্রকার বাধাই করা হতো না। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় আশির (৮০) দশক পর্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করত ও রান্নার কাজে ব্যবহার হতো কুয়ার পানি। এসময় বৃদ্ধা ঠাট্টা করে বলেন, এখন তো মানুষের সোহাগি শরির। কেউ আর গতর খাটিয়ে কিছু করতে চায় না। তাই কুয়ার বদলে সবাই মটর ব্যবহার করেই পানি তোলে।
সালাউদ্দিন/সাএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বশেষ
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
ভিন্ন স্বাধের খবর পড়ুন
বর্তমানে জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, অপরাধ, সচিবালয়, আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনসহ প্রায় সব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিটেই রয়েছে একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক। এছাড়া সারাদেশে বিডি২৪লাইভ ডটকম’র রয়েছে প্রতিনিধি।
লাইফ স্টাইল
নিবন্ধন নং- ৩২
© স্বত্ব বিডি২৪লাইভ মিডিয়া (প্রাঃ) লিঃ
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ফোন: ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০, ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
ইমেইল: [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: