পাহাড়ে কেএনএফ এর ঘাঁটিতে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান বেশ কয়েকটি আস্তানা ধ্বংস

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:১৩ পিএম

গত বেশ কিছুদিন থেকে চলা পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযানে নতুন গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কয়েকটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বান্দরবানের রুমা উপজেলা সংলগ্ন বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়া ও কেউক্রাডং পাহাড়ের কাছে মায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এসব আস্তানায় এক যোগে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর কমান্ডো সদস্যরা অংশ নেয়।

তবে এসব হামলায় কি পরিমান ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। ফেসবুকে পরিচালিত কেএনএফ (কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর একটি পেজ থেকে সংগঠনের অজ্ঞাত এক নেতা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন শুক্রবার তাদের ক্যাম্পগুলোতে যৌথ বাহিনী ব‍্যাপক গোলাবার্ষণ করেছে। তাদের বেশ কয়েকটি ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে যৌথ বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা দাবি করেছেন। তবে অজ্ঞাত ওই নেতা আরো বলেছেন ভবিষ্যতে এ ঘটনায় এলাকায় আরো ক্ষতি বয়ে আনবে।

এদিকে এসব ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনীর কোন সূত্র থেকে সত্যতা যাচাই করা যায়নি। গত দু সপ্তাহর বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মায়ানমার ও মিজোরাম সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান চলছে। নতুন গজিয়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্কিয়ার সদস্যরা পাহাড়ে একটি সশস্ত্র সংগঠনের আওতায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাঙ্গামাটির রাইক্ষ‍্যং ও বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেউক্রাডং, তাজিন ডং, মায়ানমার ও ভারতের মিজোরাম এর বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় সাঁড়াশি অভিযানটি শুরু হয়।

অভিযানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর চারটি রিজিয়নের সহস্রাধিক সেনা সদস্য, র‍্যাব ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যরা অংশ নিয়েছে। অভিযানটি পরিচালনা করা হচ্ছে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও র‍্যাব এর হেলিকপ্টার গুলো অভিযানে ব্যবহার হচ্ছে। অভিযানের সময় রাতেও দুর্গম পাহাডে উড়ে যাচ্ছে হেলিকপ্টার। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত অভিযানগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় ধরনের অভিযান বলছেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করেই পাহাড়ে পরিচালিত এ ধরনের বড় অভিযানে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত এই অভিযানের ফলাফল নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য জানায়নি সাংবাদিকদের।

তবে র‍্যাবের গণমাধ্যম উইং এর পরিচালক খন্দকার আল মইন জানিয়েছেন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল এর সদস্যরা পাহাড়ের একটি সশস্ত্র সংগঠনের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য ধরা পড়ার পর এ তথ্য উঠে আসে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই পাহাড়ে চিরুনি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবে পাহাড়ের কোন সশস্ত্র সংগঠন জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এ বিষয়ে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে বেশ কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানে নতুন গজিয়ে ওঠা সংগঠন কেএনএফ এর সাথে ওই জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন সংবাদে দুর্গম এলাকায় সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। কারা এই কেএনএফ ২০১৬ সালে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু তরুণদের নিয়ে প্রথমে কুকি চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে সংগঠনটি যাত্রা করে।

এটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় মাস্টার্স করা নাথান বম নামে এক যুবক। ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবানের ৩০০ নং আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। বম, খুমি খেয়াং ম্রো লুসাই সহ পাহাড়ের ছটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার আদায় নিয়ে এ সংগঠনটি কাজ করছে বলে তারা প্রথম দিকে জানিয়েছিলেন। পরে এই সংগঠনটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফেসবুকে পরিচালিত তাদের বেশ কয়েকটি পেইজে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারত ও মায়ানমার সীমান্ত এলাকাগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা বলে দাবি করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এই সংগঠনটির সাথে জনসংহতি সমিতির (সন্তু) মধ্যে আধিপত্য লড়াই নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ জঙ্গিদের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে এ সংগঠনটির বিরুদ্ধে। যদিও সংগঠনটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: