শাস্তির পরিবর্তে মাদক মামলার আসামীকে শুধরানোর জন্য ১১ শর্ত

পঞ্চগড়ে মাদক মামলার রায়ে শাস্তির পরিবর্তে আসামীকে শুধরানোর তাগিদে ব্যাতিক্রমি আদেশ দিয়েছে আদালত। রবিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমান এ রায় দেন। এসময় বেলাল হোসেন নামে এক আসামীকে মাদকাসক্ত জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুধরানোর জন্য ১১টি শর্ত দেন আদালত। প্রবেশনে মামলা থেকে মুক্ত হওয়া আসামী বেলাল হোসেনের বাড়ি বোদা উপজেলার পাচঁপীর ইউনিয়নের গুয়াগ্রাম প্রধানপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত মতিয়ার রহমানের ছেলে।
রায়ের আদেশে বলা হয়েছে, ওই ১১টি শর্তের কোন একটি শর্ত লঙ্ঘন হলে বা নিজেকে সংশোধন করতে ব্যর্থ হলে এই মামলায় তাকে আবারো দোষী সাব্যস্ত করে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।
শর্তগুলো হচ্ছে, (১) প্রবেশনার আগামি এক বছরের জন্য প্রবেশন অফিসারের তত্তাবধানে থাকবেন এবং তার নির্দেশনা মেনে চলবেন। (২) উক্ত সময়ে আসামী কোন অপরাধ করবেন না শান্তি বজায় রাখবেন সদাচরন করবেন এবং আদালত প্রবেশন অফিসার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তলবমতে যথাসময়ে যথাস্থানে উপস্থিত থাকবেন। (৩) উক্ত সময়কালে আসামী তার পরিবারের নির্ভরশীলদের প্রতি যতœবান হবেন এবং পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখবেন। (৪) প্রবেশন কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে আসামী পেশা ও বাসস্থান পরিবর্তন করতে পারবেন না। সবসময় কোর্টের স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে নির্দিস্ট বাসস্থান বা পেশায় থাকতে হবে। (৫) মাদক সেবন ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন না এবং মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে মেলামেশা করতে পারবেন না। (৬) যেহেতু আসামী একজন নিরক্ষর সেহেতু প্রবেশনকালীন সময়ের মধ্যে নিকটস্থ গণশিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে স্বাক্ষর জ্ঞান সহ শিক্ষা অর্জন করবেন। (৭) আসামী সরকারী বেসরকারী যে কোন একটি কারগড়ি ও বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষন গ্রহন করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। (৮) প্রবেশনারকে প্রবেশনকালীন সময়ে তার বাড়ির আশে পাশে কুড়িটি বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছ রোপন করে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে এবং উক্ত রোপিত গাছের স্থীর চিত্র প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করবেন। (৯) প্রবেশনার মাসে অন্তত দুইবার প্লাকার্ড হাতে এলাকায় ও স্থানীয় বাজারে মাদকবিরোধী প্রচারনা চালাবেন। (১০) আসামী পিতা মাতার প্রতি যতœশীল হবেন এবং দেখাশুনা ও ভরন পোষনের ব্যবস্থা করবেন। (১১) স্কুলে যাওয়া ছেলে মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া নিশ্চিত করবেন।
বিচারকের এই রায়ে আইনজীবী আসামী এবং সচেতন মহলরা সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল বেলাল হোসেন ২০ পিচ ইয়াবা সহ দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। পরে ওই বছরের ৩১শে মে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত মামলার নথিপত্র বিচারক বিশ্লেষণ করে এই ব্যাতিক্রমি আদেশ দেন বিচারক।
প্রবেশন রায় পেয়ে ১১টি শর্ত মেনে স্বাভাবিক জীবনে চলার আশ্বাস বেলাল হোসেনের। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে আমি খুব সন্তুষ্ট। আমি নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করবো। নিজের পরিবারের দেখাশোনা করবো। তাদের প্রতি যত্নশীল হবো। কেউ যেন আর মাদকের দিকে পা না বাড়ায়।
মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবি কামরুজ্জামান রাশেদ বলেন, আসলেই এ রায় সমাজের জন্য একটি ভাল বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে। আদালত আমার মক্কেলকে শুধরানোর জন্য একটি সুযোগ দিয়েছেন। ১ বছর একজন প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে তিনি থাকবেন। নিজের ভুল শুধরে নিজেকে বিপথে পা বাড়ানো থেকে সাবধান থাকবেন। এভাবে সমাজে সুন্দর ও সুশৃংখল পরিবেশ বজায় থাকবে বলে আমি মনে করি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: