প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীর নিবাস পেলেও বের হওয়ার রাস্তা নেই

পঞ্চগড়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীর নিবাস পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার তবে বাড়ির চারপাশে রাস্তা বন্ধ হওয়ার কারনে চলাফেরার সমস্যায় রয়েছে পরিবারটি। চলাফেরার জন্য দরজার সামনে দেওয়াল তুলে দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অভিযোগ তারা অবরুদ্ধ হয়ে আছে। বীর নিবাসের সামনে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী আকতার হোসেন ও তার জামাতা আরিফ হোসেন নিজেদের জায়গা দাবী করে বালুর স্তুপ করে রেখেছে, গড়ে তুলেছে দেয়াল।
বার বার বিএনপি নেতারা হুমকি দিচ্ছে পরিবারটিকে যাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিএনপি নেতাদের জায়গা ব্যবহার না করার জন্য। এতে করে প্রতিনিয়ত চলাচলে বিএনপি নেতাদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহা নূর আহম্মদ বীর নিবাসে। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও বিষয়টি সমাধান এদিকে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের অব্যাহত হুমকি থেকে বাঁচতে বীর নিবাসে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পরিবারটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহার বড় ছেলে সালাউদ্দিন বাবু তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। বীর নিবাসের সামনে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইটের দেওয়াল তুলেছে তিন বিএনপি নেতা। এরপর বালু ভরাট করার কারনে উচু হওয়ায় বর্তমানে বীর নিবাস থেকে বের হতে পারছেনা পরিবারের সদস্যরা। দেওয়ালের সামান্য একটি ছোট দরজা দিয়ে বের হলেই বিএনপি নেতারা তাদের বাধা দেয়। বীর নিবাসের সামনে বালুর স্তুপের উচ্চতা বেশি হওয়ায় গৃহস্থলির কাজের সময় নিরপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে নারীদের। বালুর স্তুপ ভেদ করে উপরে উঠার কারনে চলাফেরার সমস্যায় পড়েছেন।
বীর নিবাসে বসবাসরত সালাউদ্দিন বাবু জানান দীর্ঘদিন থেকে আমরা পাঁচ শতক জমির উপর এই্ বাড়িতে বসবসাস করেছি। আমি নিজেও মুজিব আদর্শের সৈনিক। কোন কারন ছাড়াই আমার পরিবারের উপর পূর্ব থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল ইউনিয়ন বিএনপি নেতারা। চলতি বছরে আমার বাবার নামে বীর নিবাস হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধী কয়েকটি পরিবার আমাকে নানাভাবে হয়রানি মামলা সহ হয়রানি করে আসছে। তিনি বলেন আমার বাবা এ দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। সরকার আমার বাবাকে বীর নিবাস করে দিয়েছেন। কিন্ত আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তাতে আমাদের মনে হয় বীর নিবাসে থাকা হবেনা। কারন বীর নিবাস থেকে বের হতে পারছিনা। বাড়ির সামনে বালুর স্তুপ। বার বার অঙ্গিকার সত্বেও চলাচলের রাস্তা পাচ্ছিনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ২০০৩ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহা কালিয়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করছিল যুগ যুগ ধরে। গত ২০১৮ সালে আবু জোহা মারা যায়। মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে সালাউদ্দিন বাবু সেই বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছিল। এদিকে সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী সালাউদ্দিন বাবু বীর নিবাসের জন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরে আবেদন করলে সরকার মুক্তিযোদ্ধার ওই বাড়িটি বীর নিবাসের জন্য মঞ্জুর করেন। বীর নিবাস নির্মিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয় বিএনপি নেতাদের ষড়যন্ত্র। একের পর এক নানা কুট কৌশলে মুক্তিযোদ্ধার ওই পরিবারটিকে হয়রানী করে কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতারা। প্রথমে হুমকি এরপর বাড়ির সামনে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা।
এ নিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবরে চলতি বছরের মার্চ মাসে লিখিত অভিযোগ করা হয়। গত ১০ মার্চ দুই পক্ষকে উপজেলা কার্য্যালয়ে নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে আকতার হোসেন ও তার পরিবার বীর নিবাসের সামনে রাস্তার জন্য জায়গা দেওয়ার অঙ্গিকার করেন। কিন্তু পরবর্তিতে বীর নিবাসের সামনে আর জায়গা ছেড়ে দেননি।
অভিযুক্ত আরিফ হোসেন (৩৫) জানান গত চার পাঁচ বছর পূর্বে আমার শ্বশুর আমাকে ১৬ শতক জমি লিখে দিয়েছিল। আমাদের জমিতে আমরা দেওয়াল তুলেছি। আমরা গলির মত রাস্তা করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত তারা উল্টো আমাদেরকেই হুমকি দেয়। সরকারী দলের প্রভাব খাটিয়ে আমাদের জায়গা দখল করে রাস্তা বানাতে চায়।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আকতার হোসেন জানায় সালাউদ্দিন বাবু আমাদের আত্নীয়। বীর নিবাস থেকে তাদের চলাফেরায় অসুবিধার কথা আমাদের না জানিয়ে আমাদেরকে বার বার হুমকি দেয় সালাউদ্দিন বাবু। এ কারনেই এই সমস্যা সমাধান হয়নি।
কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মোমিন জানান আসলে মুক্তিযোদ্ধার ওই পরিবারটির চলাচল দ্রুত নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা দেওয়া বে আইনি। যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাস সেজন্য তাদের চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও আকতার হোসেনের পরিবার জেদাজেদি পর্যায়ে গেছে। কোন পক্ষই ছাড়া দিতে নারাজ। যদি দুপক্ষই আমার কাছে সমাধানের জন্য আসেন তাহলে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিবো।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: