৫ কেজি চাল পেতে খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থান

                       
প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, ১০ নভেম্বর ২০২২
ছবি - প্রতিনিধি

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে:সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএস কার্যক্রম চালু রয়েছে। জনপ্রতি ৩০ টাকা কেজির দরে ৫কেজি করে চাউল পাবে। এই চাউল নিতে যাওয়া কয়েকজন গৃহবধূর সাথে রাত ১১টার দিকে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে।

আমার পরিবারে পাঁচ জন সদস্য। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে। আয় উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলতে আমার স্বামী ছাড়া আর কেউ নেই। অভাবের সংসারে সারা বছর চাল কিনে খেতে হয়। বাজারে চাউলের দাম ৬০ টাকা আর স্বামীর দৈনিক আয় ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা। সামান্য এ আয় দিয়ে বাজারে চাল কিনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে ঘুরে কোন চাউল না পাওয়ায় আজকে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি জেগে আগামীকালকে চাউল নিব।

ডিলারদের হিসেবে দৈনিক কম করে চাউলের বরাদ্দ দেওয়ার কারণে অনেকে চাউল পাচ্ছে না। এত কনকনে শীতে আর ঠান্ডায় আমি সহ আরো ২০ থেকে ২৫ জন এখানে রয়েছি। তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ডিলারদের আরো বেশি করে যেন বরাদ্দ দেয়া হয়। আমাদেরকে যেন ১০ কেজি করে দেয়া হয়। আমার প্রতিবেশীদের কাছে ২ কেজি চাল ধার রয়েছে।

এ কথাগুলো বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌর এলাকার কাঠিয়ারপাড়া মহল্লার কারিমা বেগম। আরও একজন গৃহবধূ একই এলাকার জেসমিন বেগম জানান, সংসারের অভাবের তাড়নায় ১৫ দিন থেকে ৫কেজি চাউলের জন্য ঘুরাঘুরি করছি। এখন আমার তিন থেকে চার কেজি চাউল ধার রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আজ এখানে শীতের মধ্যে অবস্থান করছি।

ওই এলাকার আরও এক গৃহবধূ সেলি বেগম জানান, আমার পরিবারের ৯ জন সদস্য। আমি গত সাত দিন ধরে পাঁচ কেজি চাউলের জন্য রহনপুর পৌর এলাকার গোলাম রাব্বানী ডিলারের দোকানে ঘুরাঘুরি করছি। কিন্তু বরাদ্দ অল্প হওয়ায় আর মানুষের সমাগম বেশি থাকার কারণে চাউল পাচ্ছি না। আমার প্রতিবেশীদের কাছে ২০কেজি চাউল ধার হয়ে গেছে। এতদিন পর যদি ৫কেজি করে চাল পায় তাহলে সংসার চালাবো কিভাবে।

তিনি জানান, তাই আজ বাধ্য হয়ে সন্ধ্যা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সারারাত জেগে থেকে হলেও আজকে চাউল নেব। আমার মত আরো ৪০ জন এখানে অবস্থান করছে। কেউ এখানে আছে, আবার কেউ বাড়িতে গিয়ে ঘুম পেরে রাত ১ অথবা ২ টার দিকে আসবে। পালাক্রমে কেউ ঘুম পাড়ছে আবার কেউ জেগে লাইন ধরে আছে। ডিলার মালিক সকাল ৯টার দিকে খোলে,আর চাউল দিতে সময় লেগে যায় সোয়া ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

এ বিষয়ে মেসার্স রাব্বানী ট্রেডার্স এর প্রো: গোলাম রাব্বানী জানান, আমার এখানে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ওএমএস এর চাউল নিয়ে যায়। তিনটি ওয়ার্ড হওয়ায় লোকসমাগম একটু বেশি ঘটে। আর যেহেতু এক টনের বেশি চাউল বরাদ্দ নেই সেক্ষেত্রে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার কারনে সকলকে ওএমএস এর চাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেউ ৭ দিন কেউবা ১৫ দিন ঘুরে ঘুরে এ চাউল পাচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, চাউল পাইনা এ কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে একটূ দেরি করে আসে তাই তাদেরকে ঘুরে যেতে হয়। কিন্তু যারা আমার কাছে আইডি কার্ড দিয়ে যায় তাদেরকে পরবর্তী দিনে চাউল দিয়ে দেই।

গোমস্তাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তারেক-উজ-জামান মোবাইল ফোনে জানান, রহনপুর পৌর এলাকার ৪জন ডিলার নিয়োগ দেয়া আছে। এক টন করে ৪জন ডিলারের জন্য ৪টন দৈনিক বরাদ্দ। কলেজ মোড়ে রাব্বানী ডিলারের সেন্টারের ৫ কেজি চাউলের জন্য সারারাত থাকার কথাটি আমার জানা ছিলো না। সেখানে ১ টনের বেশী বরাদ্দ দেয়া যায় কি না, সেটা ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে দেখবো।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নিবার্হী অফিসার আসমা খাতুন মোবাইল ফোনে জানান,এমন খবর আমার জানা ছিলো না।আর বেশী দেয়ার সুযোগতো নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কিছু করা যায় কিনা দেখব।

আশরাফুল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


পাঠকের মন্তব্য:

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

ভিন্ন স্বাধের খবর পড়ুন

বর্তমানে জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, অপরাধ, সচিবালয়, আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনসহ প্রায় সব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিটেই রয়েছে একঝাঁক তরুণ সাংবাদিক। এছাড়া সারাদেশে বিডি২৪লাইভ ডটকম’র রয়েছে প্রতিনিধি।

লাইফ স্টাইল

নিবন্ধন নং- ৩২

© স্বত্ব বিডি২৪লাইভ মিডিয়া (প্রাঃ) লিঃ
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭

ফোন: ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০, ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
ইমেইল: [email protected]