মুক্ত আকাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে রবিউলের চালকবিহীন প্লেন

স্বপ্নগুলোকে মুক্ত আকাশে পাখিদের মতো স্বাধীনভাবে ওড়ানোর তীব্র বাসনা ছিল অনেক দিনের। কিন্তু দারিদ্র্যতার সীমারেখায় বন্ধি থেকে চাইলেই কি আর সব স্বপ্নকে বাস্তাবে রূপ দেওয়া সম্ভব! তবে হাল ছাড়লে তো চলবে না। দারিদ্র্যতার নির্মম বাস্তাবতাকে পাশ কাটিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে খোলা আকাশে বিমান উড়াচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষুদে বিজ্ঞানী হতদরিদ্র রবিউল নামক এক কিশোর। অর্থের অভাবে লেখাপড়া এখন বন্ধ রবিউলের। তবে অদম্য এই মেধাবী রবিউলে চালক বিহীন বিমান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে মানুষ।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের দিনমজুর নাজু মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলাম। মাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে রবিউল। গত ৩ বছর ধরে এখন লেখাপড়া বন্ধ। দিনমজুর পিতা তার পরীক্ষা ফি দিতে না পারায় আর বিদ্যালয়ে দরজায় যাওয়া হয়নি তার। পিতার সাথে প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। তারপরও কাজের ফাঁকে পিতা-মাতার চোখ ফাঁকি দিয়ে চালকবিহীন বিমান তৈরি করেছে রবিউল। এখন উড়িয়ে সবার নজর কেড়েছেন।
নিজের তৈরি চালক বিহীন বিমান দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামের মুক্ত আকাশে। তার আবিস্কার বিমান দেখতে রীতিমত ভীড় জমিয়েছেন এলাকাবাসী। তার উদ্ভাবত বিমানটির অবকাঠামো কর্কশিটের তৈরি হলেও রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নির্মাণাধীন নবীনগর-রাধিকা সড়কে বিরামপুরে প্রতিদিন বিকালে চালক বিহীন এই বিমান উড়াচ্ছেন রবিউল। আর তা উপভোগ করছেন স্থানীয়রা।
তবে স্থানীয়রা জানান, তার বাবা একজন দিনমজুর। রবিউল খুবই মেধাবী। অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ। তারপরও নিজের হাত খরচের টাকা জমিয়ে আর মা কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তৈরি করেছেন এই চালক বিহীন এই বিমান। তবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে সে আরও ভাল কিছু তৈরি করতে পারবে।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী রবিউল ইসলাম জানান, সবসময় ব্যতিক্রম কিছু করার ভাবনা মাথায় আসে। ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা থাকলেও অর্থের অভাবে বাস্তাবায়ন করতে পারছি না। চালক বিহীন এই বিমানটি তৈরি করেছি ও কষ্ট করে। ককসিট দিয়ে বিমানটি তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। একবার চার্জ করলে দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারে। এসময় কারও সহযোগিতা পেলে সে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
রবিউলের বাবা দিনমজুর নাজু মিয়া জানান, আমার ছেলে ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে অনেক কিছু আবিস্কার করেছে। অভাবের সংসারে এই ছেলেটাকে লেখা পড়া করাতে পারি নাই। সে বিমান তৈরি করেছে, বিমান তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, যদিও টাকা গুলো দিতে আমাদের কষ্ট হয়েছে। ছেলের তৈরি করা বিমান দেখার জন্য যখন বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে তখন আনন্দ পাই। আমার ছেলে যদি কারো সহযোগিতা পাই বা সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাই তাহলে সে লেখা পড়া করতে পারবে এবং অনেক কিছু তৈরি করতে পারবে।
রবিউলের মা তাসলিমা বেগম জানান, টাকার জন্য ছেলেটা লেখাপড়া করাতে পারেনি। ওর বাবার সাথে প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। এর ফাঁকে সে ককসিট দিয়ে এই বিমান তৈরি করেছে। এটি তৈরি করতে আমাদের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছে, বাকি টাকা কাজ করে প্রতিদিন কিছু কিছু জমা রেখেছিল, তা দিয়ে এই বিমানটি তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিটি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফা কামাল বিডি২৪ লাইভকে জানান, অদম্য মেধাবি রবিউল। তার তৈরি বিমান আকাশে উঠে বেড়াচ্ছে। তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করলে দেশ ও জাতি খুবই উপকৃত হবে। তবে অর্থের অভাবে এখন লেখাপড়া বন্ধ রবিউলের। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেলে একদিন হারিয়ে যাবে এই ক্ষুদে বিজ্ঞানি রবিউল।
এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো: ইয়ামিন হোসেন বিডি২৪ লাইভকে জানান, বিষয়টি জানার পর তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার সৃষ্টিশীল চেষ্টাকে সফল করার জন্য সব রকম সহায়তা করা হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: