কাঙ্ক্ষিত অনুষদ না থাকায় অনেকটাই পিছিয়ে পবিপ্রবি

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২, ০২:১০ পিএম

আবু হাসনাত তুহিন, পবিপ্রবি থেকে: 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়' হিসেবে প্রতিষ্ঠা হলেও শুধুমাত্র কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং অনুষদ ব্যাতিত নেই উল্লেখযোগ্য কোন প্রকৌশল অনুষদ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পার করলেও কতটুকু তা পূরন করতে পেরেছে সেটাই এখন জনমনে প্রশ্ন।

১৯৭২ সালে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০০ সালের ৮ জুলাই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ২২ বছরে শুধুমাত্র কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং (সিএসই) ব্যাতিত আর কোন প্রকৌশল অনুষদ চালু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিকবার দাবি উঠলেও তা পূরণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা "প্রযুক্তি তুই পালিয়ে যা" স্লোগানে আন্দোলন শুরু করে।

তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিকস এন্ড কমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইন্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ও বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি সমূহ মেনে নিয়ে বেশ কিছু ইন্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করার ব্যাপারে কার্যকর পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সে প্রতিশ্রুতির প্রায় ৩ বছর পার হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয় নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রযুক্তি শব্দটি কেবলই নাম সর্বস্ব। আমাদের পরে অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। সে হিসেবে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি"।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জামিল সুজন বলেন, "আমাদের পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েও অন্যান্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন প্রযুক্তিগত অনুষদ প্রতিষ্ঠা করেছে। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরিয়ে গেলেও, বিশ্ববিদ্যালয়টির যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি তথা প্রযুক্তি অনুষদীয় শিক্ষাকার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় নি"

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. কামরুল ইসলাম চ্যানেল২৪-কে জানান, "সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন কোন অনুষদ প্রতিষ্ঠা ও আসন বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের বিধিনিষেধ রয়েছে, সরকার বর্তমানে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জোর দিচ্ছে। তবুও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ইউজিসি'তে প্রযুক্তি ভিত্তিক একটি অনুষদ প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদন করা হয়েছে"।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, "গুণগত শিক্ষাদান বর্তমান সরকারের একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি, অনুষদ বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে নয় বরং শিক্ষার যথাযথ মান ঠিক রাখাই বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা। আমারাও সরকারের এ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত, তাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদ বৃদ্ধির চেয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ল্যাব ও গবেষণার সুবিধাসহ কিভাবে অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো যায় সেদিকে গুরুত্বারোপ করছি"। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইন্জিনিয়ারিং নামে দুটি বিভাগ চালু ব্যাপারে অবহিত করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর গোলাম মোঃ মুরাদুল বশিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আগামী দিনে সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলবে এমনটাই আশা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: