পবিপ্রবির জার্মপ্লাজমে গবেষণায় দক্ষিণাঞ্চলে অপার সম্ভাবনা চুইঝালের

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৫৭ পিএম

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত জার্মপ্লাজমের মধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের গাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উপযোগী নানা জাতের বৃক্ষের উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকগণ। জার্মপ্লাজমে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪শতাধিক ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুল গাছের উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহবুব রব্বানী এমন একটি বিষয়ের উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যার আবাদ দক্ষিণাঞ্চল তথা পটুয়াখালী ও বরিশালে খুবই কম।

দক্ষিনাঞ্চলে চুইঝাল চাষাবাদে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তার উপর গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে উপযুক্ত মাটি নির্বাচন, সামঞ্জস্যপূর্ণ বাউনি গাছ নির্বাচন, বংশবিস্তার, রোগ বালাই ও পোকামাকড় ইত্যাদি। এ পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে বাওনি হিসাবে আমলকি ছ‌ইলা এবং জামরুল গাছ উত্তম। অপর দিকে পেয়ারা এবং বড়ই গাছে চুইঝাল লতা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সাধারণ মাঠে, পতিত জমিতে অথবা বাড়ির আসে পাশে চাষ করা যায়।

ছ‌ইলা, আমলকি, অরবড়‌ই, পেয়ারা, চালতা, জামরুল ও কামরাঙা সহ বিভিন্ন গাছের সাথে একটা পান গাছের মতো দেখতে এটার নাম হচ্ছে চুইঝাল। এটি একটি মসলা জাতীয় ও ঔষধি সুস্বাদু গাছ।

চুই-ঝাল খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়াও নড়াইল জেলায় চাষ করা হয়। উঁচু জমিতে এটা চাষ করা খুবই সহজ এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মাংস রান্না করার সময় চুইঝাল ব্যবহার করলে মাংসের স্বাদ অনেকটা বেড়ে যায়। চাষ না করায় পটুয়াখালী বা বরিশাল এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে প্রফেসর ডঃ মাহাবুব রব্বানী জানান, আমরা লক্ষ্য করে দেখলাম যে খুলনা অঞ্চলে যদি এর ফলন ভালো হয় তবে চেষ্টা করে দেখব পটুয়াখালী-বরিশাল অঞ্চলে এর ফলন ভালো পাওয়া যায় কিনা। সে লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে পবিপ্রবির জার্মপ্লাজমে কলম সংগ্রহ করে বিভিন্ন গাছের গোড়ায় লাগানো হয়। নিবিড় পর্যেবক্ষণে দেখার চেষ্টা করা হয়, এটা কোন কোন গাছের সাথে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। আর একটা বিষয় গবেষণা করা হয় যে সাধারণ মাঠে এটা রোপন করলে বৃদ্ধি কেমন হয়।

গাছটির যে কান্ড ও মূল হয়, সেটি আসলে মসলা বা ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর মূল, পরিপক্ক কান্ড, পাতা সবটাই খাবার উপযোগী। এটায় যথেষ্ট ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। তার মধ্যে যথেষ্ট মিনারেল ভিটামিন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট প্রপার্টিজ রয়েছে যা স্বাস্থের জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও নরম কান্ড বংশবিস্তার ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে চুই-ঝাল কোন তরকারি বা মাংসে ব্যবহার করা হয় তবে স্বাদ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি ঝালের ঘাটতিও পূরণ হয়। অন্য ঝাল বা মরিচ কম ব্যবহার করলেও চলে। ফলে এটি মরিচের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে ভালো একটা দিক হচ্ছে এর আবাদে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না, বেশি পরিচর্যার‌ও প্রয়োজন হয় না। কোন ভাবে যদি একটা ভালো চারা টেকে, সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। চুই-ঝালের বংস বিস্তার করাও সহজ। গিঁটযুক্ত শাখা কেটে অন্যত্র রোপন করলে সেখান থেকে নতুন গাছ জন্মায়। সে হিসেবে আমরা মনে করি চুইঝাল যত বেশি সম্প্রসারণ করা যাবে তত বেশি এলাকার কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পাবে এবং যত বেশি উৎপাদন বাড়ানো যাবে তত বেশি মসলা, ঔষধি ও ঝালের ঘাটতি পূরণ হবে।

আমাদের গবেষণার লক্ষ্য হচ্ছে ব্যতিক্রমী কোন কিছু জনসাধারণের সামনে নিয়ে আসা। এছাড়াও আমরা দেশীয় অনেক ফল গাছের উপরে গবেষণা করি যেমন, বীজ বিহীন বিলাতি গাব, কামরাঙা, তেঁতুল, আমলকি, ব‌ইচি, লুকলুকি, কাউফল, আম, কলা, কাঁঠাল, পেয়ারা, ড্রাগন, অরবড়‌ই ইত্যাদি। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক অবহেলিত ফলজ বনজ, ঔষধি ও বাহারী বৃক্ষ সম্পদ রয়েছে যার যথাযথ গবেষণা করাই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

যেমন চুইঝাল এর ক্ষেত্রে কৃষক নিজে খাবার হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি অতিরিক্ত অংশ উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারেন। যার কেজি প্রতি দর ৬থেকে ৮শত টাকা।

দক্ষিণাঞ্চলে চুইঝাল উৎপাদনে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তার উপর গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া বিশেষ করে উপযুক্ত মাটি নির্বাচন, সামঞ্জস্যপূর্ন বাউনি, গাছ নির্বাচন, বংশবিস্তার রোগ বালাই ও পোকামাকড় ইত্যাদি পর্যেবক্ষণ। গবেষণায় দেখা গেছে বাওনি হিসাবে আমলকি, ছইলা এবং জামরুল গাছ উপযুক্ত অপরদিকে পেয়ারা ও অরবর‌ই গাছ অনুপযুক্ত। সাধারণ মাঠে চুই ঝাল চাষ করা যায়। যেগুলোর উপর একটু গবেষণা করলেই স্বল্প খরচেই বা স্বল্প ব্যবস্থাপনায লাভবান হওয়া যায়। এটি চাষাবাদ করে নিজের চাহিদা মেটানো যায় পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবেও সাবলম্বী হ‌ওয়া যায়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: