হাওরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন সোনালি ধান কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৫৭ পিএম

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে হাওরাঞ্চলে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কাটার উৎসব। আমন ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। সোনালি ধান কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দাম তুলনামুলক ভাবে অনেক বেশি হওয়ার ফলে কৃষকের মধ্যে স্বস্থির নিঃস্বাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। এর ফলে একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষকরা।

করোনা ও বন্যায় এই সময়ে হাওরাঞ্চলের মানুষকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আক্রান্ত হয়েছে কৃষক-কৃষানিরা। এর মধ্যেও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে রোপা আমনের পাকা ধানের ফসল। সোনালি ধানের ঘ্রাণে ভরে আছে মাঠ।

জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ২ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৪২৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে ব্রি ধান-৭৫ সহ অন্যান্য আগাম ও উফশী জাতের ধান ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। কম সময়ে ফলন এবং কম খরচে এই নতুন জাতের ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন হবিগঞ্জের হাওরের অনেক কৃষক।

নবীগঞ্জ উপজেলার ঘুঙ্গিয়াজুড়ি, বড় হাওর এলাকার নিম্না লে কোনো বছরই বোরো ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় নাই। এবার হাওরে পানি কম থাকায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে হাইব্রিড ব্রি ধান ৭৫ চাষ করে লাভবান হয়েছে এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা।
ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর এলাকার মোঃ আব্দুল মালিক জানান, এ জাতের ধান চাষে সময় কম লাগে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় বালাইনাশক স্প্রে করতে হয় না। ফলে ফলন ভালো হয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তায় চলতি মাসে ব্রি-৮৭, ব্রি-৭৫, ব্রি-৯০, বিনা ধান ১৭,ব্রি হাইব্রিড-০৬ সহ অন্যান্য জাতের আমন ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। হাওরাঞ্চলে বোরো ব্যতীত অন্য কোনো ফসল হতো না, অনুকূলে থাকায় সেসব জমিতে এখন রোপা আমন ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে বাজারে ধানের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।

ইউনিয়ন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, এ ধানের চাল মাঝারি চিকন এবং সামান্য সুগন্ধি। রান্নার পর ভাত হতে সুগন্ধি ছড়ায়। এ কারণে চালের চাহিদা রয়েছে। এই ধানের জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিসহ সরিষা ও আগাম শাকসবজি চাষ করে লাভবান হবে। কৃষকদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামীতে এই জাতের ধানের চাষ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নবীগঞ্জ উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, ফলন হয়েছে ১৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রায় বেশি পৌঁছেছে। এছাড়া আমন মৌসুমে দুই দফায় ভূর্তুকি হিসাবে ৪২০০জন কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ১০৫০ জন কৃষককে সবজি বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।

আউশকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিন দৌলতপুর গ্রামের কৃষক কাজল মিয়া জানান, নিয়মিত পরিচর্যা ও সময়মতো সার প্রয়োগের ফলে ফলন ভালো হয়েছে। তবে শ্রমিক সঙ্কট থাকায় জমি থেকে ধান কাটতে সময় বেশি লাগছে। ধান কাটার ব্যয়ও বেড়েছে। যারা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে পারছেন, তারা স্বল্প সময়ে ও কম খরচে ধান ঘরে তুলতে পারছেন।

ওই এলাকার কৃষক আক্কাছ মিয়া বলেন, গত মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে আমনের ফলন ভালো হয়নি। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া, পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাই কম হওয়ায় অধিক ফলন হয়েছে। যদি ধানের ভালো দাম পাওয়া যায়, খরচ পুষিয়ে লাভ হবে।

নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকৌশলী কৃষিবিদ এ.কে.এম. মাকসুদুল আলম জানান, সরকার যদি উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধি করে এবং ভর্তুকি মূল্যে আরও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদান করে চাষাবাদে কৃষকের খরচ কম হয়েছে। এতে করে কৃষকরা আগামীতে ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে চাষাবাদ করায় এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি বলেন এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আরও বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্থানীয় কৃষকদেরকে উন্নত জাতের বীজ ও নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকেন। চলতি আমন মৌসুমে সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে উপজেলায় কৃষকদেরকে ৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার বরাদ্ধ দিয়েছে। এতে স্বল্প খরচে ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই এবং প্যাকেটিং করে মাঠ থেকে ধান আনা সহজ হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: