একলিমাকে দেখতে লোকজনের জমজমাট সমাগম

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৩:১৪ পিএম

ইমরান হোসেন, সাতক্ষীরা থেকে: দীর্ঘ ৪১ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একলিমা বেগমকে দেখতে লোকজনের জমজমাট ভীড় তৈরী হচ্ছে। সাত দিন হল একলিমা বেগম বাংলাদেশে এসেছেন। এদিকে, একলিমা বেগমকে দেখতে প্রতিনিয়ত লোকজন ভীড় করছে। সবকিছু মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছে একলিমা বেগম ও তার পাকিস্তানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দূরদূরান্তর থেকে লোকজন আসছে একলিমাকে এক নজর দেখার জন্য। কেউ বা ফুল নিয়ে আসছে আবার কেউ মিষ্টি নিয়ে আসছেন একলিমার জন্য।

মরিয়াম বেগম নামের এক ব্যক্তি জানান, ৪০ বছর পরে একলিমা ফিরে এসেছে এটা জানতে পেরে তাকে দেখতে এসেছি। এখানে এসে দেখছি জমজমাট পরিবেশ। অনেক লোকজনের সমাগম এখানে। সব সময় লোকজন আসছে একলিমাকে দেখতে। বাংলাদেশে তিনটি ছেলেমেয়ে আর পাকিস্থানে চারটি ছেলে মেয়ে আছে একলিমার। একলিমা এখন দোটানায় পড়ে গেছে।

একলিমা বেগমের ভাতিজা মোবারক হোসেন জানান, আমার ফুফু ৪০ বছর পরে দেশে ফিরেছে। প্রতি মুহুত্বে লোকজন বাড়িতে আসছে। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। পাশ্ববর্তী স্বজন ও প্রতিবেশীরা দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন। লোকজন এত বেশি আসছে যে তিন বেলা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিনা আমরা। সবাই এসে আমার ফুফু একলিমার সাথে কথা বলছে। একলিমা বেগম বাংলা ভাষা বুঝতে পারছেন তবে তিনি বাংলা বলতে পারছেন না।

একলিমার পাকিস্তানের দ্বিতীয় পক্ষ্যের বড় ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল জানান, বাংলাদেশের অনেক গল্প শুনেছি। তবে এখানকার মানুষ এত বেশি অতিথি পরায়ন সেটা না আসলে জানতে পারতাম না। মাকে নিয়ে বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে ঘুরছি। সব কিছু মিলিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। বাংলাদেশি খাদ্যখাবার গুলো বেশ মজাদার। নিত্যনতুন খাদ্যখাবার খেতে পেরে বেশ ভাল লাগছে। তাছাড়া অপরিচিত মুখগুলো দেখতে দেখতে সবাইকে এখন আপন লাগছে।

একলিমা বেগম ঢাকা পোস্ট কে জানান, প্রতি মুহুত্বে অনেক লোকজন আসছে তার সাথে দেখা করতে। সকালে ঘুম থেকে উঠার আগে লোকজন এসে ভীড় করতে শুরু করছে। এভাবে সারাদিন লোকজনের সমাগম থাকছে। কিছু কিছু মানুষকে চিনতে পারছি। পরিচিত মুখগুলো দেখতে পেরে আত্নাতৃপ্তি পাচ্ছি। আত্নীয় স্বজনসহ পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে লোকজন এক নজর আমাকে দেখতে আসছে। আগামী ২৫ দিন বাংলাদেশে থাকবো তারপরে পাকিস্থান ফিরতে হবে। এভাবে যাতায়াত থাকবে বাংলাদেশে।

খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ জানান, একলিমা বেগম দীর্ঘ বছর পরে স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছে। বিষয়টি বেশ আনন্দের। এদিকে একলিমা বেগমের পাকিস্থান থেকে ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন দেখতে আসছে। সবাই একলিমাকে দেখছে ও বিভিন্ন কথ্যকথা সময় পার করছেন। মাকে ফিরে পেয়ে একলিমার তিন সন্তান অনেক আনন্দ প্রকাশ করছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের কোনো এক দিন হারিয়ে যান একলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি তার। অবশেষে চার মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান মেলে একলিমার। একলিমা বেগম (৬৫) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে ও তিন সন্তানের জননী। স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর পর পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে খোঁজ মিলে তার। কিভাবে তিনি সেখানে পৌঁছালেন সেটি বলতে পারেনি কেউ।

দীর্ঘ ৪০ বছর পরে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১২ টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায় তিনি। পরবর্তীতে একইদিন দুপুর ৩ টায় সাতক্ষীরার তালা গঙ্গারামপুর গ্রামে পৌঁছায় একলিমা। পাকিস্থানে যাওয়ার পরে সেখানে একলিমার দ্বিতীয় বিবাহ্। একলিমার সাথে পাকিস্থান থেকে তার দ্বিতীয় পক্ষ্যের বড় ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল এসেছেন।

দীর্ঘ ৪০ বছর পরে একলিমা বেগমকে কাছে পেয়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে পড়েন একলিমার স্বজনরা। একলিমা বেগমকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় এলাকাবাসী।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: