রাস্তার উপরেই দিনে ১৫ লাখ টাকার কেনাবেচা চণ্ডিহারায় মহাসড়কের কলার হাটে

বগুড়ার শিবগঞ্জের চণ্ডিহারা এলাকায় একদল মানুষের কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয় ভোর বেলায়। শুধুমাত্র কলাকে ঘিরে এই কর্মযজ্ঞ চলে মাত্র কয়েকঘণ্টা। এরই মাঝে এখানে প্রায় লাখ ১৫ টাকার বেচাকেনা হয়ে যায়। তবে বগুড়ার সবচেয়ে বড় কলার হাট হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মহাসড়কের ওপর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ব্যবসা করতে হয়।
উপজেলার চণ্ডিহারা রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে প্রতিদিন সকালে এই হাট বসে। তবে মূল হাটের দিন শনিবার ও বুধবার। হাট পরিচালনাকারীরাও মহাসড়কের ওপর ব্যবসার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু স্থান না পাওয়ায় এমন ঝুঁকি নিয়েই হাট পরিচালনা হয়ে আসছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়ক ঘেঁষে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে কলার হাট বসেছে। হাটের প্রথম অংশে অনুপম কলা। মাঝে অল্প কিছু সাগর এবং শেষভাগে চিনিচাম্পা কলা। দুই সারিতে বসা কলার চাষীদের সঙ্গে বিক্রেতাদের দরদামে সরগরম হয়ে উঠেছে হাট।অনেক চাষী ভ্যানে করে কলা আনছেন। কেউবা সাইকেলে করে নিয়ে আসছেন কলা।
হাটে অনুপম জাতের কলার সরবরাহ বেশি। এগুলো মানভেদে প্রতি কাঁদি অনুপম কলা ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাগর জাতের কলা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও দেশী চিনিচাম্পা কলার দাম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
উপজেলার চাঁনপাড়ার কলাচাষী তোতা মিয়া অনুপম জাতের কলা নিয়ে এসেছিলেন হাটে। জানান, ১২ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন। প্রতিটির দাম পেয়েছেন ৪০০ টাকা করে।
মোকামতলার বাসিন্দা সাবলু সরকার ১৬ শতক জমিতে সাগর কলা চাষ করেছেন। ১০ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন চার হাজার টাকায়। আরও কিছু আছে এগুলো বিক্রি হলে চলে যাবেন তিনি।
এ কলাচাষী বলেন, ভোর বেলায় কলা নিয়ে আসা হয় হাটে। বেলা ১০টার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সমস্যা মহাসড়কের ওপর কলা বিক্রি করতে হয়।
তার পাশে থাকা একই এলাকার কলাচাষী আজিজুর রহমান জানান, গ্রীষ্ম কাল কলার উৎপাদনের মূল সিজন। শীতে চাহিদা কম থাকে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে কিছু কলার বাগান নষ্ট হয়েছে। এ জন্য হাটে কলা কম উঠেছে।
শহিদুল ইসলাম নামে আরেক ব্যাপারী বলেন, ৭ হাজার ৯০০ টাকায় ২৫ কাঁদি অনুপম জাতের কলা ক্রয় করেছি। আরও কলা নিব। এই কলাগুলো চট্টগ্রামে যাবে।
মোকামতলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নিজে কলার ব্যবসার পাশাপাশি চাষও করেন। চুক্তিতে ১ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেন প্রতিবছর। এতে বছরে প্রায় এক লাখ টাকা আয় হয় তার।
সাইফুল ইসলাম বলেন, মাটির কারণে আগে থেকে এখানে কলা ভালো হয়। বালু মাটি হওয়ায় সাগর কলা বেশি হয়। আর এ কারণেই এখানে কলার হাটও গড়ে উঠেছে। এ হাট থেকে দিনে কয়েক ট্রাক কলা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে যায়।
চণ্ডিহারা এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক খোকা বলেন, এই কয়েকদিনের মধ্যে আজকে (বুধবার) কলার আমদানি বেশি। এবার ঝড়ে কলা মার খাইছে। তাই কলা কম দেখা যায়। তা না হলে হাটে কলার চাপে হাঁটা যেত না।
মহাসড়কে ব্যবসার বিষয়ে আব্দুল খালেক জানান, রাস্তা দিয়ে সব সময় বড় গাড়ি যাওয়া আসছে। হাট এখানে হওয়ায় তাদের এভাবেই ব্যবসা করতে হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় তিন মৌসুম মিলে ১১ শ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এতে মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শিবগঞ্জে কলার আবাদ হয়েছে প্রায় ৬০০ হেক্টর।
এসব তথ্য দিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, চণ্ডিহারা কলার হাটে প্রায় দিনে প্রায় ১৫ ট্রাক কলা বিভিন্ন জেলায় যায়। এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে প্রায় ৮৫ হেক্টর জমির কলা নষ্ট হয়েছে। তারপরেও যে কলার জমি রয়েছে তাতে ফলন ভালো।
হাট পরিচালনাকারীরা জানান, হাটটি প্রায় ৩৫ বছর আগে শুরু হয়। এর আগে মহাস্থান হাটে এই কলার বেচাকেনা হতো। আগে এ হাটে ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা থেকেও কলা আনা হতো। তবে এখন এই কলার হাট ভেঙ্গে অন্যান্য জেলায় গড়ে উঠেছে। চণ্ডিহারা থেকে সব জেলায় কমবেশি কলা যায়। তবে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে বেশি।
হাট পরিচালনাকারী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার মধ্যে চণ্ডিহারা সবচেয়ে বড় কলার হাট। মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক ট্রাক কলা যায়। প্রতি ট্রাকে অন্তত ৮০০ কাঁদি কলা ধরে।
আরেক পরিচালনাকারী ও ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল তোতা। দৈনিক অন্তত ১৫ লাখ টাকার কলা চণ্ডিহারা হাটে বিক্রি হয়। শনিবার ও বুধবারে প্রায় ২০ লাখ টাকার ব্যবসা হয়। হাটে কলার ক্রেতাদের কাছে প্রতি কাঁদি ৫ টাকা করে খাজনা নেয়া হয়। ট্রাকের ক্ষেত্রে সাইজ ভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা খাজনা নেয়া হয়।
হাটের সংকট নিয়ে ইজারাদারের সহকারীদের আক্ষেপ, চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জেলার একমাত্র কলার হাটের জায়গা হারাতে হয়েছে। হাটে কলার ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য সুব্যবস্থাপনা নেই। হাটের জন্য নতুন জায়গা দেয়া হবে। তবে কবে, কোথায় হবে তা জানেন না তারা।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, বর্তমানে হাটের কোনো নিজস্ব স্থান নেই। রাস্তার ধারেই হাট বসছে। তবে আমরা জায়গা খুঁজছি। জমি পেলেই হাটের স্থানের সমস্যা দূর হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: