১০ গ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি একটি ব্রিজ

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৪৮ পিএম

ইমরান হোসেন, সাতক্ষীরা থেকে: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের কানায়দিয়া কপোতাক্ষ নদের উপরে ব্রিজের দাবি পাশ্ববর্তী দশ গ্রামের মানুষের। পাশ্ববর্তী ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম একটি বাঁশের তৈরী ঝুলন্ত সাঁকো। যেখানে যাতায়াত করতে যেয়ে প্রতিনিয়ত যানবাহনসহ লোকজন নদীতে পড়ে যায়। দূরঘটনার শিকার হয় সকল বয়সের পথযাত্রীরা। দূরঘটনার ভয়ে সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে চাইনা শিক্ষার্থীরা।

তাছাড়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে পাশ্ববর্তী কপিলমুনি নিয়ে যেতে চরম দূরভোগে পড়তে হয়। এদিকে, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মধ্যবর্তী আন্তঃজেলা হওয়ায় এখানে একটি ব্রিজের ব্যবস্থা হয়নি আজও এমনি দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। একটি ব্রিজ অথবা বেইলি ব্রিজের জন্য কয়েক দফায় মানবন্ধন করেছে ভুক্তভোগী জনসাধারণ।

স্থানীয় স্কুল ছাত্রী ফারজানা জানান, আমরা যখন সাঁকোর উপর দিয়ে যায় তখন সাঁকোটি নড়ে। তখন আমাদের অনেক ভয় লাগে। তাছাড়া এখানে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। শুধুমাত্র এখানে একটি ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা নেই বলে পার্শ্ববর্তী কপিলমুনি স্কুলে কেউ ভর্তি হতেও চায়না। আমরা এখানে একটি ব্রিজ চায়।

আজিজুর ইসলাম নামের একজন শিক্ষক জানান, এটি সাতক্ষীরার কানায়দিয়া ও খুলনা জেলার কপিলমুনি সংযোগস্থল। এখানে বাঁশের সাঁকোর কারনে লোকজনের চলাচলের খুব অসুবিধা হয়। স্কুল কলেজ থেকে ফেরার পথে শিক্ষার্থীরা সাঁকো ভেঙ্গে পড়ে গেছে কয়েকবার। এছাড়া সাইকেল, ভ্যান ও মটরসাইকেল এখান থেকে পড়ে যায় প্রতিনিয়ত। বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকোর উপর দিয়ে চলতে হয়।

বিশেষ করে রাতে যদি কেউ অসুস্থ হয় সেক্ষেত্রে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে মারাত্মক ঝুঁকি নিতে হয়। একটা ডেলিভারি রুগিকে হাসপাতালে নিতে কতটা কষ্ট করতে হয় সেটা এই অঞ্চলের মানুষ ভাল জানে। তাছাড়া কৃষি সহ অন্যান্য প্রয়োজনী মালামাল পারাপারের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের সকলের প্রাণের দাবী অনতিবিলম্বে এখানে অন্ততপক্ষে একটি বেইলী ব্রিজ দেওয়া হোক।

আব্দুর কুদ্দুস নামের এক পথচারী জানান, দুইদিন আগে একটি মটরসাইকেল পানিতে পড়ে গেছে সাঁকোর উপর থেকে। তাছাড়া মা বোনেরা সাঁকোর উপর দিয়ে পারাপার হতে পারেনা কারন সাঁকোটি ঝাঁকা লাগলে নড়াচড়া করে। বাঁশ আর রশি দিয়ে ঝুলিয়ে তৈরী করা সাঁকোতে প্রতিনিয়ত মানুষ দূরঘটনায় শিকার হচ্ছে। চেয়ারম্যান মেম্বর অনেক বছর ধরে চেষ্টা করেও এখানে ব্রিজের ব্যবস্থা করতে পারছেনা কারন এটা দুই জেলার সীমান্তবর্তী স্থান।আমরা সকলে চাই এখানে দ্রুত ব্রিজের ব্যবস্থা করা হোক।

জালালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর কানায়দিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম জানান, কানাইদিয়া- কপিলমুনি আন্তঃজেলার কপোতাক্ষ নদের উপর একটি ব্রিজের দাবি বহু বছরের। প্রায় ১০ টি গ্রামের মানুষ কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য বিক্রির একমাত্র কেন্দ্রস্থল কপিলবুনিয়া সেখানে খাদ্যশস্য নিয়ে কৃষকদের যাতায়াতের চরম ভোগান্তির তৈরি হয়। প্রায় প্রতিদিনই বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে এখানে। খাদ্যশস্য খাবার চাউলসহ যানবাহন নিয়ে নদীতে পড়ে যায় পথযাত্রীরা।

এই ভোগান্তি বহু বছর ধরে চলে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলেও চরম দুর্ভোগ পড়তে হয়। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় বাঁশের সাঁকো থেকে নিচে পড়ে মারাও গেছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখানে একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করা হোক এটা দশ গ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি।

জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল হক লিঠু জানান, এই সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত হয়। স্কুলের ছোট বাচ্চারা যাতায়াত করতে অনেক ভয় পায় তবুও জীবনে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় তাদের। অনেকবার সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর প্রতিশ্রুতি দিলেও একটি ব্রিজের ব্যবস্থা হয়নি এখানে। মূলত স্থানটি আন্তঃজেলা হওয়ার কারণে এখানে ব্রিজের বাস্তবায়ন হয়নি।

অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষের যাতায়াত বেশ দুষ্কার হয়ে যায় এই ঝুলন্ত সাঁকোর উপর দিয়ে। মোটরসাইকেল ইজিবাইক পায়ে চালিত ভ্যান প্রতিনিয়ত নদীতে পড়ে যায়। তবুও বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় এই পথেই যেতে বাধ্য হয় স্থানীয়রা। সেতু মন্ত্রণালয় সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অবহেলিত এই জনপদের প্রাণের দাবি অন্ততপক্ষে একটি বেলি ব্রিজের ব্যবস্থা করা হোক এখানে।

সাতক্ষীরা এলজিইডি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সুজায়েত হোসেন জানান, সেখানকার জন্য আন্ডার হান্ড্রেড একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাঠানো হয়েছে। পাশ না হয়ে আসলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়া যাবেনা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: