শেরপুরের ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে মাষকলাই চাষে ঝুকছে কৃষকরা

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০৮:২৮ পিএম

শেরপুরের নকলা উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও পতিত জমিতে মাষকলাই চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। নকলায় এবার মাষকলাই উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ। নাম মাত্র শ্রমে ও স্বল্প ব্যয়ে বাড়তি আয়সহ মাষকলাই ক্ষেতের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সবার নজর কাড়ছে।

শীতের আগমনী বার্তার দৃশ্য ও ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে চাষ করা মাষকলাইয়ের সবুজের সমারূহ দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তার ধারে বপন করা মাষ কলাইয়ের দৃশ্য যেন সকল চিত্রকে হার মানাবে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া মাষকলাই চাষের জন্য বেশ উপযোগী। চরাঞ্চলের কৃষকরা কয়েক বছর ধরে সল্প সময়ে অল্প ব্যয়ে ও নাম মাত্র শ্রমে মাষ কলাই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাই কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের মাষকলাই চাষে বরাবরই উদ্বুদ্ধ করে আসছে। ফলে বাড়ছে মাষডাল চাষীর সংখ্যা।

নদ নদীর তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও চরা লসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন মাষকলাই আবাদের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে। মাষকলাই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোণা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী ও উরফা ইউনিয়নের অগণিত কৃষক। আগামীতে এবছরের তুলনায় দ্বিগুণ আবাদ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তারা। তবে এবছর উপজেলার চরঅষ্টধর, চন্দ্রকোণা, পাঠাকাটা, টালকী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নে মাষকলাইয়ের আবাদ বেশি হয়েছে।

তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১২৫ একর জমিতে মাষকলাই চাষ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদসহ বিভিন্ন নদী ও শাখা নদীর চরাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও পতিত জমিতে এবং রাস্তার পাশের পতিত জমিতে বপন করায় ২০০ একরের অধিক জমিতে মাষকলাই আবাদ হয়েছে বলে কৃষকরা ধারনা করছেন।

কৃষকরা বলেন, কৃষি অফিস তাদের লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে থাকেন। তবে বাস্তবতা হলো তাদের হিসেবের তুলনায় উপজেলায় অনেক বেশি মাষডাল বপন করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের বেলে ও বেলে-দোঁআশ মাটির অনাবাদি জমিতে কম পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়ায়, চাহিদা অনুযায়ী দাম পাওয়ায় এবং ব্যয়ের তুলনায় লাভ কয়েকগুণ বেশি পাওয়ায় কৃষকরা মাষকলাই চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। এখানকার উৎপাদিত মাষকলাই ডালের দানা অধিক পুষ্ট ও সুস্বাধু হওয়ায় বেশ চাহিদা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রনদসহ বিভিন্ন নদী ও শাখা নদীর তীরবর্তী অনুর্বর পতিত জমিতে অন্যকোন ফসল ভালো না হলেও মাষকলাই ডালের উৎপাদন বেশি হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা ধান ছেড়ে মাষকলাই চাষে ঝুঁকছেন। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান, অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী, কমছে বেকারত্ব, বাড়ছে কৃষি উৎপাদন। ফলে দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে কৃষি অর্থনীতি। এমনটাই মনে করছেন কৃষিবিদসহ সুশীলজন।

ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, চর অষ্টধরের একরামুল ও কফিল উদ্দিন, বাছুর আলগার কৃষক মুক্তার হোসেন ও মোকলেছুর রহমানসহ অনেকেই জানান, মাষকলাই চাষে কোন খরচ নেই বললেই চলে। যে খরচ হয় তার তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি লাভ পাওয়া য়ায়।

কৃষকরা জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শে মাষডাল ক্ষেতের যতœ নিচ্ছেন তারা। তাদের মাষকলাই ডাল ক্ষেতের অবস্থা দেখে অনেকে মনে করছেন এবারের উৎপাদন কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রা ছাড়াবে। উৎপাদন খরচ কম। কিন্তু লাভ বেশি পাওয়ায় আগামীতে মাষকলাই ডাল চাষীর সংখ্যা ও জমির পরিমাণ অনেক বাড়বে এমনটাই আশাব্যক্ত করছেন অনেকে। শস্য মজুদকারী তথা মজুদ ব্যবসায়ীরা জানান ধান, গম ও ভূট্টা মজুদ করার চেয়ে মাষকলাই ডাল বা সল্পকালীন অন্যান্য শস্য মজুদ করলে লাভ ও কদর উভয়ই বেশি পাওয়া যায়। এতে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বাংলাদেশে চাষকৃত ডাল ফসলের মধ্যে মাষকলাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। এই ফসলটি অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে ফলানো সম্ভব। এই ফসল আবাদে খরচ ও শ্রম কম লাগে। তাই কৃষকরা দিন দিন মাষকলাই ডাল চাষে ঝুঁকছেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

তাছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় বিভিন্ন জাতের মাষকলাই চাষ হলেও এবছর উফসী জাত বারি-১, বারি-২, বারি-৩, বিনামাষ-১, বিনামাষ-২ এবং স্থানীয় জাত রাজশাহী ও সাধুহাটি জাতের মাষকলাই বেশি চাষ করা হয়েছে। এবছর হেক্টর প্রতি ১.৫ টন থেকে ২ টন উৎপাদন হিসাবে মাষডাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: