নাগেশ্বরীতে অন্ধকারে আলোর শিখা "ফাঁন্দেরচর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র"

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০৫ পিএম

প্রাত্যহিক জীবনে রোজ আলো ফোটে পূবের আকাশে, কেটে যায় অন্ধকার। সে আলোয় নাগরিক সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেকেই আলোকিত হয়, আলোকিত করে মা,মাটি ও মানুষকে। কিন্তু সরেজমিনে নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ফাঁন্দের চরের অবস্থা যেন ভিন্ন রুপ।

নদী বেষ্টিত এ চরাঞ্চলে নেই কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্‌রাসা। প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন- এ যেন তাদের কাছে দুর আকাশের চাঁদ। নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত এ অঞ্চলের শিশু কিশোর-কিশোরীরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে শিশু শ্রম কিংবা বাল্য বিবাহের কবলে পরে। শুধু তাই নয়- স্থানীয়দের তথ্যমতে- অঞ্চলটি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই নিরক্ষর। নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো এ অঞ্চলের মানুষগুলোর ইচ্ছা থাকলেও সন্তানদের শহর কিংবা বাইরে কোথাও লেখাপড়া করাতে পারেনা আর্থিক কারণে। ফলে স্বপ্ন থাকলেও সে স্বপ্ন যেন তাদের কাছে দুর আকাশের চাঁদ। বাধ্য হয়ে অল্প বয়সেই সন্তানদের মাছ ধরা ও কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজে লাগাতে হয় অবিভাবকদের।

ঠিক এমনি সময় চরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত এসব শিশু কিশোরদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে শহিদুল ইসলাম ও শাপলা খাতুন দম্পতি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন " চর দামালগ্রাম (ফান্দেরচর) প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র"। প্রায় ১ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে শতাধিকশিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। তাদের এ উদ্যোগ অন্ধকারাচ্ছন্ন এই চরাঞ্চলের শিশুদেরকে শিক্ষার আলো ছড়াতে ইতোমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন এলাকায়। শিক্ষার সুযোগ পেয়ে খুশি শিশু, কিশোর, কিশোরীরা। স্বপ্ন বুনছেন সমাজের আর দশজনের মতো পড়াশোনা করে মা, মাটি ও মানুষকে আলোকিত করার।

নাজমুল ইসলাম (১২) নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সে আগে মাঠে কাজ করতো। পাওয়ার টিলার চালিয়ে হালচাষ করে সংসারে সহযোগিতা করতো। কখনও তার স্কুলে যাওয়া হয়নি। স্বরবর্ণ কী সেটাও শেখেনি সে। পরে শহিদুল-শাপলার শিক্ষা কেন্দ্রে পড়ার সুযোগে আর মাঠে কাজ করে না। এখন সে লেখাপড়া শিখছে। আয়েশা খাতুন (১০) ও কাকলী খাতুন (১১) সহ আরও অনেক শিক্ষার্থী জানায়, তারা এর আগে কখনও স্কুলে যায়নি। সুযোগ হয়নি লেখাপড়ার। আগে মায়ের সাথে সংসারের কাজে সহযোগিতা করতো। তারা এখন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত। লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষা শিক্ষিত হবার স্বপ্ন তাদের।

'ফান্দেরচর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র'র পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান- অনেক কষ্টে লেখাপড়া করেছেন তিনি। এলাকার শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত হওয়ায় এ কষ্ট তাড়া করে তাকে। তাই এসব শিশুদেরকে লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে বহুদিনের। বিয়ের পর স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে স্ত্রীও রাজি হন এতে। পরে শিশুদেরকে অন্ততঃ প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার মানসে পরিত্যাক্ত একটি মক্তব ঘরে অর্ধ শতাধিক শিশু নিয়ে, অ, আ, ক, খ দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে শুরু করেন শিক্ষা কার্যক্রম। শহিদুল ইসলামের স্ত্রী শাপলা খাতুন জানান, স্বামীর এই সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হয়ে দুজন মিলে চরাঞ্চলের অবহেলিত শিশুদেরকে শিক্ষা দান করছেন। এতে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন তিনিও। প্রত্যাশা, এখানকার শিশুরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে আর দূর হবে চরাঞ্চলের অন্ধকার।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা জাহান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানলাম। তবে শিক্ষা কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে তাদেরকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: