শালিশিতে মারধর, থুতু চাটিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ইউপি সদস্যসহ গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৫ পিএম

ঢাকার ধামরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে এনে শালিশির নামে সংখ্যালঘু চর্মকার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে বেধরক মারধর ও থুতু চাটানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ইউপি সদস্য মিমাংসার নামে পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও পরিষদের গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মারধর ও থুতু চাটানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে সাংবাদিকদের কাছে এমনি অভিযোগ করেন ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের আটানীপাড়ার এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী গোকুল মনিদাস।

ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভিতরে ভুক্তভোগী গোকুল মনিদাসকে নির্যাতনের একটি ভিডিও গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। এরপর থেকে নির্যাতনের প্রতিবাদে দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব নেটিজেনরা। সুয়াপুর ইউনিয়নের আটানীপাড়ার এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী গোকুল মনিদাস খড়ারচর এলাকার বাজারে চর্মকারের কাজ করেন।

ভুক্তভোগী গোকুল বলেন, আরেকজনের বউয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হইছিলো। আমারও বউ-বাচ্চা আছে। পরে ওই মহিলা আমার কাছে চইলা আসছিলো। তখন আমি তারে দ্বিতীয় বিয়া কইরা ঘরসংসার করি। ৪-৫ মাস আগে আমার সাথে কাইজা লাগার পর তার আগের স্বামীর কাছে চইলা যায়। এতদিন ওইখানেই ছিলো। গত ২৬ নভম্বের ওই মহিলা আমার বাইত্তে আইসা কয়, আমাকে তুমি বাঁচাও। আমার জামাই আইজকা আমারে মাইরা ফালাবো। তখন আমি তারে বাইত্তে উঠাইছি। পরে এইটা নিয়া আমার বাড়ির সামনে ২৭ নভেম্বর মেম্বারসহ এলাকার লোকজন শালিস বসাইছিলো। আমারে আর ওরে এলাকা ছাইড়া যাইতে হইবো এটাই বিচার।

গোকুল আরও বলেন, রাত ৯টার দিকে ওই বিচার থাইকা সফি মেম্বার দুই গ্রাম পুলিশরে দিয়া আমারে আর ওই মহিলারে কাউন্সিলে নিয়ে যায়। পরে আমাগো দুইজনরে দুই কক্ষে রাখে। দফাদার রহিম আর চৌকিদার ফজল আমারে লাঠি দিয়া মাইরা সারা শরীরে দাগ বানায় দিছে। রহিম আমারে থুতু মেঝেতে ফেইলা চাইটা খাওয়াছে। সেটা আবার মোবাইলে ভিডিও কইরা ফেসবুকে ছাইরা দিতে বলছে লোকজনরে। আইজকা এলাকার অনেকে আমারে এই ভিডিও দেখাইছে। আমার মোবাইলেও সেই ভিডিও চইলা আসছে। আমি অপরাধ কইরা থাকলেতো দ্যাশে আইনকানুন ছিলো।

গোকুল অভিযোগ করেন, মেম্বার সফি কাউন্সিলে নেয়ার পরে মিমাংসার করবো এই জইন্যে ১৫ হাজার ট্যাকাও চায়। আমি অনেক কষ্টে ৫ হাজার ট্যাকা দিছি।

অভিযোগের বিষয়ে সুয়াপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, ওগো পাড়ায় একটা বিচারের মতো বইছিলো। তখন ওইখানে বিচার মানে না। ওহান থাইকা সফি, মেম্বার ওরে তখন কাউন্সিলে আনাইছিলো। আমরা গিয়া আনছি। পরে মহিলাডারে অর স্বামীর সাথে পাঠায় দিছে। কাউন্সিলের মধ্যেই পরে সফি মেম্বার ওরে কান ধইরা উঠবস করাইছে। কইছে, আর কোনদিন ওই মাইয়ার দিকে যাবি না। মেম্বার ওরে ছ্যাপ (থুতু) ফেলায় ছ্যাপ চাটাইছে।

কারা থুতু চাটালো কিংবা মারধর করলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক পোলাপান আছিলো। ওরা হয়তো ভিডিও করছে। আমারতো বাটন মোবাইল। আগেপরে ওরে মারছে কি না সেটা বলতে পারব না। তবে আমরা মারি নাই।

সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সফিকুল ইসলাম সফি বলেন, ও (গোকুল) একটা মহিলাকে বাইর কইরা আনছিলো। ওই মহিলাটার বড় মেয়ে, নাতী আছে। পরে ধমকটমক দিয়া এইসব কাজ করতে মানা করা হইছে। কারণ ওদের এলাকার বিচারে ওইখানকার লোকজন ওরে মারবো। এই কারণে আমি পরিষদের নিয়া গেছি। গোকুলের বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। মারেও নাই। থুতু ফেলায় চাটানো, এগুলা হয় নাই।

মিমাংসার কথা বলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ফেসবুকে ভিডিও দেয়ার বিষয়টাও ভালো কইরা জানি না। ওইখানে চৌকিদার, আরও লোক আছিলো তারা থুতু চাটাইতে পারে। আমি তখন ওখানে ছিলাম না। রাত ১০টার দিকে চইলা আসছি।

এ বিষয়ে সুয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন বলেন, আমি কিচ্ছু জানি না এগুলি। এখন শুনতাছি। এইমাত্রই চিন্তাভাবনা করতেছি সমাধান করা যায় কি না?

এব্যাপারে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে কেউ এখনও আসে নাই। লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: