নির্বাচনে অনিয়ম: এডিসিসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইসি

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় নির্বাচন বন্ধ করে দেয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরই প্রেক্ষিতে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন। তদন্ত প্রতিবেদনে এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম প্রমাণ পাওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তকাসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যাতীত অন্য সংস্থা বা বিভাগ থেকে নির্বাচনে দায়িত্বে আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে একমাসের মধ্যে ইসিকে অবহিত করতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল তার কমিশনের লিখিত সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। ১. তদন্তে প্রমাণিত যে ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন, সে সকল কর্মকর্তার নামের তালিকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবে। নিয়ন্ত্রণকারী/নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দায়িত্বপালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।
২. কেন্দ্র নম্বর ৯৪ এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জনাব মো. সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক উদয়ন ডিগ্রী কলেজ কে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকুরী থেকে ২ মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্থ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তাঁর বিরুদ্ধে অসাদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে মর্মে পত্র দিবে।
৩. একইভাবে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কেন্দ্র নম্বর ২ (জনাব তরুণ কুমার, এসআই. গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৫৪ (জনাব মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৫৯ (জনাব মোঃ আনিছুর রহমান, এসআই গোবিন্দগঞ্জ থানা), কেন্দ্র নম্বর ৬২ (জনাব কনক রঞ্জন বর্মন, এসআই সাদুল্যাপুর থানা) ও কেন্দ্র নম্বর ১০৫ (জনাব মোঃ দুলাল হোসেন, এএসআই, আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়) এর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে -দায়িত্বপালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে পত্র দিবে। কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।
৪. অতিরিক্ত জেলা প্রশাশক (সার্বিক) জনাব সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসাদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পত্র দিতে হবে।
৫. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল নম্বর ০১৭২৬৩৪১৩৭৭ । তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ করা হয় নাই) তাঁকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের জন্য ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে পত্র প্রদান করবে। ৬. রিটানিং কর্মকর্তা জনাব সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্বপালনে অবহেলার জন্য তার বিরুদ্ধে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৭. এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত না করলে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬(২) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।।
৮. সকল কেন্দ্রের দায়িত্বপালনকারী নির্বাচনী এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক সীলকৃত ব্যাগে রয়েছে, যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ের ওপর আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই তাই যে সকল কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে সে সকল কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গাইবান্ধা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনী এজেন্টদেরকে পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।
৯. ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিইসি বলেন, যারা বিভিন্ন প্রার্থীদের এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের শনাক্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের এই উপ-নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান নৌকা প্রতীক নিয়ে, জাতীয় পার্টির (জাপা) এএইচএম গোলাম শহীদ লাঙ্গল মার্কা নিয়ে, বিকল্প ধারার জাহাঙ্গীর আলম কুলা প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান আপেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়বেন।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই মারা গেলে তার সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।এ উপ নির্বাচন ১২ অক্টোবর চলার মাঝপথে অনিয়মের কারণে বন্ধ করে দেয় ইসি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: