হাওরাঞ্চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব থেকে

বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলের নতুন সমস্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাদের দখলে বিভিন্ন বালু মহাল। বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি নদী ও পাহাড়ী এলাকায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব থেকে। বালু খেকোরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। বিশেষ করে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি বালু মহাল এখন বালু খেকোর কবলে। উল্লেখযোগ্য সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই নদী, বিজনা নদী ,কালনী ও রুপাই ছড়া বাগান এলাকা অবৈধ ভাবে বালু তোলা হচ্ছে।
প্রভাবশালী বালু খেকোরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়রা ডাইক ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের কাছে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। প্রশাসন বলছে শিগরিই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়রা ডাইক ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বড় ধরনের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জ্বালানী খনিজ মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপি জোর সুপারিশ করেছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সংস্থা তালুকদার এন্টারপ্রাইজের বলগ্রেড, নৌকা আটক করে আর্থিক জরিমানা ও মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দিলে তারা আবারো অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে খননযন্ত্রের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ কারণে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টসহ ঐ এলাকার পাহাড়পুর,পারকুল বনগাঁও ও ব্রাম্মনগ্রামের শেরপুর লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আশংকার মধ্যে রয়েছে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট।
হবিগঞ্জের বাহুবল এলাকার জনৈক মুদ্দত আলী চেয়ারম্যান তার এলাকার চা-বাগান ও রাবার বাগানের ঝল থেকে অবৈধ ভাবে প্রতিদিন বালু তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, খোয়াই নদী, বিজনা নদী, কালনী নদীর চর গুলো থেকে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সুনামগঞ্জের কুশিয়ারা, সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে বালু চলছে দেদারছে।
অভিযোগে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা সদরের তালুকদার এন্টারপ্রাইজের আশরাফুল ইসলাম ওরফে বালু আশরাফ বিবিয়ানা প্লান্ট পার্শ্ববর্তী কুশিযারা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। এ বালু একই এলাকার পার্শ্ববর্তী অর্থনৈতিক জোন শ্রীহট্রতে সরবরাহ করছে। নদীর পানিতে ছোট জাহাজে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে গভীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী পাড়ে ১০টি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। আশপাশের আবাদি জমি ও বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে তাদের পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।
শেরপুর এলাকার আসাদ উদ্দিন বলেন, এভাবে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী তীরবর্তী বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট বাড়িঘর ও আবাদি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। এর আগে একই কারণে তাদের অনেক বাড়িঘর ও জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে তাদের অবশিষ্ট জমি ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট ভাঙ্গনের কবলে পড়বে।
পাহাড়পুর গ্রামের সেলিনা বেগম বলেন, বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের উত্তর পশ্চিম পাশে পাশে একটি কার্গো জাহাজ রয়েছে। সেটি থেকে পাইপের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। জাহাজের সঙ্গে একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) রয়েছে। ফলে আমাদের গ্রামের চরম ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়রা ডাইক ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বড় ধরনের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই জাহাজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লস্কর, সারেং ও শ্রমিকেরা সমকালকে বলেন, জাহাজটি মৌলভী বাজার জেলার মনাই এন্টার প্রাইজ ও আশরাফ এন্টারপ্রাইজের নামে বালু উত্তোলন করছে। জাহাজের কর্মচারীরা যন্ত্রের সাহায্যে নদী থেকে বালু জাহাজে তোলেন। পরে জাহাজ থেকে শ্রীহট্র (শেরপুর) অর্থনৈতিক জোনে সরবরাহ করা হয়। প্রতি দিন কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। বালুখেকোরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য হুমকির মূখে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টসহ ১০টি গ্রাম।
বালু উত্তোলনকারী তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী আশরাফ হোসেন বলেন, তাঁদের ছোট জাহাজ আছে। এর সঙ্গে একটি খননযন্ত্র আছে। এর সাহায্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও সরবরাহ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কিছু লোকের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাঁরা অবৈধভাবে বালু তুলছেন। আমার কোম্পানী কোন বালু তুলছে না। মনাই এন্টার প্রাইজ বালু তুলছেন।
এব্যাপারে মনাই এন্টার প্রাইজের মনাই মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কুশিয়ারা নদীতে তার লীজ থাকলেও এখন তিনি কোন বালু তুলছেন না। যে বা যারা তার এন্টার প্রাইজের নাম বলছে এটা ডাহামিথ্যা কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন ‘আমরা অসহায় কিছু রাঘব বোয়ালদের কাছে,তারা উপর মহলে ম্যানেজ করে আমাদের চাপে রেখে অবৈধ কাজ করে যাচ্ছেন।’ হবিগঞ্জ পানি উন্নয়নবোর্ডের প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা সাধারণত যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করেন। এ কারণে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে।আশপাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে ভাঙন আরও বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছেন। ইতি পুর্বে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিনসহ নৌকা আটক করে আর্থিক জরিমানা হয়েছে। আবারো যদি নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুশিয়ারা নদীতে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই। তিনি বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন। তাকে প্রশ্ন করা হয় কারা আপনার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নাম বলা যাবে কি, তিনি এবিষয়ে এখন নাম বলা যাবে না। পরবর্র্তীতে নাম জানানো হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: