কক্সবাজারে আ.লীগ নেতাদের স্নায়ুযুদ্ধ

দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা আ.লীগের কমিটি হয়নি। দলের নেতাকর্মীরা চাচ্ছে কমিটি ও নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু কমিটির উপর কর্তৃত্ব বজায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। দলীয় পদবী পেতে মূলত চলছে এ যুদ্ধ।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সম্মেলনের ৬ বছর ১০ মাসের বেশি সময়ের মধ্যে সভাপতির পথটিতে রদবদল হয়ে ভারপ্রাপ্ত হলেও আর হয়নি সম্মেলন ও নতুন কমিটি। আর এর মধ্যে ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সফরে আসছেন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার এসেছিলেন ২০১৭ সালের ৬ মে।
টানা সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময় পর এবারের কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ ডিসেম্বর বুধবার প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ওই দিন আন্তর্জাতিক নৌ মহড়ার উদ্বোধন শেষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী লাবণীয় পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশাল জনসভায় ভাষণ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে আওয়ামীলীগের পক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জনসভায় সবচেয়ে বেশি জনসমাগম সহ নানা প্রস্তুতি নিলেও আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের স্নায়ু যুদ্ধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেড়ে গেছে জনসভাস্থলের আশ-পাশ সহ কক্সবাজার শহর। আর ওইখানে অনেকেই নিজকে জেলা আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে হয়েছে স্বাগত মিছিলও। একই সঙ্গে কক্সবাজারের ৪ টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী হিসেবে চালাচ্ছেন প্রচারণা। এর মধ্যে একে অপরের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, আওয়ামীলীগ একটি বৃহত্তর সংগঠণ। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চিরদিন আছে এবং থাকবে। ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার আগমন ও ১৩ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলন। ফলে স্বাভাবিকভাবে পদ প্রত্যাশীদের তৎপরতা বেড়েছে। ইতিমধ্যে দেখা গেছে জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল আলম নিজকে ভারমুক্ত সভাপতি হওয়ার চেষ্টায় আছেন। সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানও সভাপতি হতে আগ্রহী, তবে তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রেখে দিলেও নারাজ নন। সাংগঠণিক কোন কর্মকান্ডে খুব বেশি সক্রিয় না হলেও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সভাপতি প্রার্থী ও চকরিয়া পেকুয়া আসনের প্রার্থী হিসেবে ব্যানার-ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ জোর তৎপর। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য জেলার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিকের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
আর রেজাউল করিম নিজকেও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব, কৃষকলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন। দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আসবেন বলে তৎপরতা আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ৪ টি সংসদীয় আসনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এমপিরা যেমন তৎপর, সম্ভাব্য প্রত্যাশীরাও তৎপর। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এবারের জনসভা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ জানান, তিনি জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ২ বছর ধরে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী আসবেন আর ৫ দিন পর সম্মেলন। তৎপরতা বাড়ানো স্বাভাবিক। একই সঙ্গে তার সমর্থকরা মিছিল সহ নানাভাবে তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ৭ ডিসেম্বর জনসভা সফলভাবে শেষ করাই জরুরী বিষয়। ১৩ ডিসেম্বর সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী যাকে দায়িত্ব দেবেন তিনি সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হবেন। তিনি নিজকে কোন পদের প্রার্থী হিসেবে থাকবেন না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত বলে জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাড়ে আট মাস পর ১৩ অক্টোবর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে মনোনীত সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই কমিটিতে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করেন। সিরাজুল মোস্তফার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় অনুমোদিত জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতির তালিকায় থাকা ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: