মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে গাজীপুর হানাদার মুক্ত হয়েছিল ১৫ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৪ পিএম

রাসেল শেখ, গাজীপুর থেকে: গাজীপুরে বিজয়ের আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে ফেলেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর ছেড়ে পালাতে হয় হানাদার বাহিনীকে। ওই দিন গাজীপুরের (তৎকালীন জয়দেবপুর) ছয়দানা এলকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি কনভয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।

গাজীপুরের বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেদিনের কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৩ ডিসেম্বর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ জোরদার করেন। ১২ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা জয়দেবপুরে সম্মিলিত আক্রমণ চালালে পাকিস্তানি সৈন্যরা ভীত ও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১৩ ডিসেম্বর পুবাইলে মুক্তিযোদ্ধারা জোরালো আক্রমণ চালায় এবং মাইন দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য বোঝাই ট্রেনের কয়েকটি বগি ফেলে দিলে বেশ কিছু সৈন্য হতাহত হয়। এদিকে মুক্তিবাহিনীর জোরালো আক্রমণে ভীত হয়ে রাজবাড়ী সেনানিবাস, সমরাস্ত্র কারখানা, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, রাজেন্দ্রপুর সমরাস্ত্র ডিপোতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে মনস্থ করে। তারা খণ্ড খণ্ডভাবে চান্দনা-চৌরাস্তায় জড়ো হতে থাকে।

এদিকে উত্তর রণাঙ্গন অর্থাৎ ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও টাঙ্গাইল থেকেও পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র-মুক্তি ও কাদেরিয়া বাহিনীর প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে সড়কযোগে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসার পথে পথিমধ্যে কড্ডা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে চান্দনা-চৌরাস্তায় জড়ো হতে থাকে। চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরাট একটি কনভয় (সমরাস্ত্র বোঝাই সৈন্যদল) ১৪/১৫ ডিসেম্বর ঢাকার পথে রওনা হয়। এদিকে টাঙ্গাইল থেকে পিছু ধাওয়াকারী মিত্র-মুক্তি ও কাদেরিয়া বাহিনী কড্ডা ব্রিজ পার হতে না পেরে কিছুটা পিছু হটে দক্ষিণ দিকে কাশিমপুর জড়ো হয়।

পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার পথে ছয়দানা নামক স্থানে পৌঁছলে কাশিমপুর থেকে সম্মিলিত বাহিনী মর্টার-কামানের সেল নিক্ষেপ এবং প্রবল গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ ছাড়া রাস্তার পাশের ট্রেঞ্চ থেকে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি গ্রুপ আক্রমণ চালিয়ে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এমন সম্মিলিত প্রবল আক্রমণে বিপর্যস্ত পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এখানে নিহত হয় ৪-৫শ পাকিস্তানি অফিসার-সৈন্য এবং ধ্বংস হয় ট্যাঙ্ক, কামান-মর্টারসহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও যানবাহন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকার কাছে এটাই ছিল বড় ধরনের একটি যুদ্ধ। গাজীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধের গাজীপুর জেলা অধিনায়ক কাজী মোজাম্মেল হক তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, গাজীপুরের সর্বশেষ ছয়দানা যুদ্ধে তার নেতৃত্বে মিত্র-মুক্তিবাহিনীর অংশগ্রহণ করেছিল। সে যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গাজীপুর মুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গৌরবের। আমরা পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের এক দিন আগেই মুক্ত হতে পেরেছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: