ছেলের জীবন বাঁচাতে কিডনি দিলেন মা!

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ (২৬)। মাস্টার্সে পড়ুয়া এই ছেলে ছোট থেকেই বড় হয়েছে অভাব-অনটনের। এমনকি সংসার থেকে খরচের টাকাও দিতে পারেন না বাবা। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করেন এই শিক্ষার্থী। তবে হঠাৎই থমকে দাঁড়ায় তার জীবন। দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায় তার। তাকে দ্রুত বাচানোর জন্য দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে, নয়তো বাঁচানো যাবে না। এমন খবরে বাবা-মা পড়েন চিন্তায়। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয় কিডনি দেবে তার মা। অবশেষে মায়ের দেওয়া একটি কিডনিতে প্রাণ বাঁচে ছেলের।
সন্তানের প্রতি স্বার্থহীন ভালোবাসা দেখানো এই মায়ের নাম বাসন্তী রানী দেবনাথ (৪৩)। একমাত্র ছেলে বিকাশ চন্দ্র দেবনাথকে (২৬) বাঁচাতে তিনি তার একটি কিডনি দিয়েছেন।বিকাশ চন্দ্রের বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই এলাকায়। বাসন্তী-তপন দম্পতির একমাত্র ছেলে বিকাশ বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
বিকাশের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বছর খানেক আগে হঠাৎ করে বিকাশ অসুস্থতা বোধ করেন। ঢাকা শ্যামলীতে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকরা জানান তার দুটি কিডনি বিকল হয়েছে। দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ কথা শুনে বাসন্তী রানী দেবনাথ ছেলেকে বাঁচাতে একটি কিডনি দিয়ে দেন। অসুস্থ বাসন্তী রানী দেবনাথ জানান, বিকাশ আমার একমাত্র ছেলে। সে বগুড়ায় পড়াশোনা করে। অনার্স পাসের পর মাস্টার্সে ভর্তি হয়। কিন্তু পরীক্ষার আগেই এই রোগ ধরা পড়ে। আমাদের জমাজমি নেই। তার বাবা দিনমুজুরের কাজ করে। ছেলেকে পড়াশোনার টাকা দিতে পারি না। সে সেখানে টিউশনি করে পড়ালেখা করছে।
তিনি আরো জানান, ছেলের কিডনি বিকলের কথা শুনে আমরা চিন্তায় পড়ি। চিকিৎসার প্রয়োজনে টাকা যোগাড় হচ্ছিল না। দশ কাঠা জমি বিক্রি করে এক বছর চিকিৎসা চালাই। একটি কিডনি যে কারও কাছ থেকে নিয়ে প্রতিস্থাপন করতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হবে। কিডনি সংগ্রহ ও টাকা যোগাড় করা অসম্ভব ছিল। নিরুপায় হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে আমি একটি কিডনি দিয়েছি। বিকাশের বাবা তপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, গত ৯ ডিসেম্বর দুপুর দুটার দিকে অপারেশন শুরু হয়ে টানা এগারো ঘণ্টা চলে। এরপর কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এখন চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতে হিমশিম হচ্ছে। ছেলেকে আরও তিনমাস এখানে থাকতে হবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছে। এখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আছি।
তিনি আরো জানান, দশ কাঠা জমি চার লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। তাছাড়া আরও চার লাখ চাকার মতো ঋণ হয়েছে। এই ঋণ কীভাবে শোধ করবো তা জানি না। আমি অন্যের জমিতে দিনমুজুরের কাজ করি। আর এ দিয়েই সংসার চলতো। এখন তো ঢাকায় আছি। কাজও করতে পারছি না। কি করবো বুঝতে পারছি না। বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমি এখন সুস্থ আছি। অনার্স পাসের পর মাস্টার্সে ভর্তি হই। মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য ফরমপূরণের সময় কিডনি বিকলের ঘটনা ধরা পড়ে। পরীক্ষার জন্য আর ফরমপূরণ করতে পারিনি।
স্থানীয় আমদই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহানুর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, বিকাশ আমার ইউনিয়নের শিক্ষিত ছেলে। আমি যখনই শুনেছি তখন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। সকল কাগজপত্র ঠিক করে দিয়েছি। এখন যদি কোনো সহায়তা লাগে তাহলে আমাকে জানালে আমি করবো। ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম জানান, বিকাশ চন্দ্র দেবনাথ এখন সুস্থ আছেন। তার মা তাকে কিডনি দিয়েছেন। মায়ের বাম পাশের কিডনি ছেলের ডান পাশে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আগামী তিন মাস পর্যন্ত তাকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: