অভিযান-১০ লঞ্চ অগ্নিকান্ডের ১ বছরপূর্ণ আজ

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০১ পিএম

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ২৪ ডিসেম্বর। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে (২৪ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান ১০ লঞ্চে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় ৪৯ জন। ২৩ ডিসেম্বর বিকাল ৫ টায় ঢাকা সদরঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশ্য ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসে।

একবছর পূর্ণ হলেও এখনো ১৬ জনের মৃতদেহ শনাক্ত হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষায় ১৪ জনকে শনাক্ত করা হলেও তাদের স্বজনরাও পায়নি তেমন কোন সহায়তা। পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে মানবেতার দিন কাটছে স্বজনদের। স্বজন হারাদের আক্ষেপ গনকবর অযন্র আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে কবরগুলো। জঙ্গলের স্তুপ হয়ে আছে এক বছরেই। প্রশাসন কবরগুলো সঠিক সংরক্ষণে কোন ব্যাবস্হা নিচ্ছেনা।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, নিহতদের ১৯ জনের মৃতদেহ ওই দিনই হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে এবং সনাক্ত না হওয়া অজ্ঞাত ২৩ মৃতদেহ দাফন করা হয়েছিল বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী গণ কবরে এবং ১ জনের ঝালকাঠিতে। পরে স্বজনদের মধ্যে ৩০ জনের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অজ্ঞাত ১৪ জনের মৃতদেহের পরিচয় মিললেও এখনো পরিচয় মেলেনি ১৬ জনের মৃতদেহের। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের তালিকায় এখনো নিখোঁজের সংখ্যা ৩০ এবং ৭ মৃতদেহের হদিস আজও মেলেনি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ মিরাজ তার বৃূূদ্ব বাবা- মা, স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে অভিযান -১০ লঞ্চে আসছিলেন বরগুনা। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে তিনি সহ তার মা-স্ত্রী ও শিশু সন্তান বেঁচে গেলেও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান তার বাবা। ডিএনএ পরীক্ষায় বাবার মৃতদেহ শনাক্ত হয়। হাফেজ মিরাজের আক্ষেপ, আল্লাহ দুটি চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন,তার কাছে শুকরিয়া। স্বজনরা এখনো বাবার কবরটি বুঝে পায়নি এটাই হচ্ছে কষ্টের।

একই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোট টেংরা গ্রামের ফজিলা আক্তার পপি। পপির মা আমেনা বেগম বলেন, বাবা-মা বেঁচে থাকতে সন্তান মারা গেলে এর থেকে কষ্টের কিছু থাকতে পারে না। আমরা কিছু চাই না, শুধু আমার মেয়ের কবরটা চাই। আমরা বেঁচে থাকতে এই আশা পূরণ হবে কিনা জানিনা।

এদিকে যাদের মৃতদেহ শনাক্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগ পরিবারই উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তেমন কোনো সহায়তাও তারা পাননি।
বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের মোল্লার হোড়া গ্রামের কালু। তার স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায়। ডিএনএ পরীক্ষায় সনাক্ত হলেও কবরও বুঝে পাননি। পাননি কোন সহায়তাও।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিখোঁজ ৩০ যাত্রীর মধ্যে ১৪ জন শনাক্ত হয়েছে। আমরা ওই পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তার আবেদন নৌ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।২৭ ডিসেম্বর এই সকল পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে বলে তিনি জানান। ভয়াবহ এই দিনটিকে স্মরণ করে সরকারী- বে-সরকারী কোন পর্যায় থেকেই কোন ধরনের অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়নি।

উল্লেখ্য, এ র্ঘটনায় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অভিযান ১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখকে প্রধান ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে বরগুনার মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আইনজীবী নাজমুল ইসলাম নাসির ও নৌ আদালতে পৃথক ভাবে মামলা করেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান।এছাড়া ঝালকাঠিতেও একটি মামলা দায়ের করা হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: