ধ্বংসের মুখে কিংবদন্তির 'সাগরদীঘি'

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৩ পিএম

ঐতিহ্যবাহী পর্যটন সম্ভাবনাময় সাগরদীঘির সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ দখল, মাছ চাষ, পুকুরের দুই পাড়ে পোল্ট্রি ফার্মসহ নানা অনিয়মের কবলে পড়েছে ঐতিহ্যের কিংবদন্তি সাগরদীঘি। দিন দিন দীঘিটি তাঁর নিজস্ব জৌলুশ হারাচ্ছে। স্থানীয়রা ঐতিহ্যবাহী দীঘিটির সৌন্দর্য্য ফেরাতে ও একটি আধুনিক পর্যটন এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত পালবংশের কিংবদন্তি সাগর রাজার ঐতিহাসিক সাগরদীঘিটি রয়েছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। জনবহুল এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয় রেখায় এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেই স্থানটি ঠাঁই করে নিয়েছে। তৎকালীন রাজার নাম অনুসারে দীঘির নামকরণ হয়েছিল। তবে রাজার নামে থেকেই এই অঞ্চলের পরিচিতি শুরু হয় সাগরদীঘি নামে। দীঘি খননের পর লোহানী থেকে রাজার নাম যুক্ত করে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় লোহানী সাগরদীঘি।

ইতিহাস বলছে, পালবংশীয় আমলে এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির বিরাট সংকট ছিল। প্রজাদের মঙ্গলার্থে তৎকালীন পালবংশীয় রাজা সাগর পাল পানি সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীঘি খননের পরিকল্পনা করেন তিনি। প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের প্রচেষ্টায় প্রায় ১৩ একর জায়গা জুড়ে খনন করেন এ দীঘি। পরবর্তীতে বিশাল এই দীঘিতে পানি না উঠলে মহা চিন্তিত হয়ে পড়েন তৎকালীন রাজা সাগর পাল।

লোকমুখে শোনা যায়, ঘুমের মধ্যে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন। যদি দীঘিতে তার সহধর্মিণীকে নামানো হয় তবেই পানির দেখা মিলবে। পরদিন রাজা তার সহধর্মিণীকে সব বললেন। রাজ দরবারের সবাইকে বিষয়টা জানালেন। পরে প্রজাদের কথা চিন্তা করে রাণী রাজি হলেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে দিনক্ষণ ঠিক করে রানীকে দীঘিতে নামালে ধীরে ধীরে পানি ওঠেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দেখতে দেখতে কানায় কানায় পানিতে ভরে যায়, ওই দিন সেখানেই রাণীকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। রাণীর আত্মা দীঘির চারপাশে ঘুরে বেড়ায় এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে পূজা-অর্চনা শুরু করেন। দীঘিতে চৈত্র মাসে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বারুনি গঙ্গা স্নান করেন।

দীঘিরপাড় ঘেঁষে জনবসতি গড়ে ওঠতে শুরু করে। কালের বিবর্তনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাশনালয় ও ব্যবসা বানিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে লোহানী সাগরদীঘি বাজার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দীঘির উত্তর পাশে অবস্থিত সাগরদীঘি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কালি মন্দির, দক্ষিণে সাগরদীঘি দাখিল মাদরাসা ও গজনবী ঈদগাহ মাঠ, পূর্বে সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘি বাজার।

দীঘির পশ্চিমপাড়ে শান বাঁধানো ঘাটলার ধ্বংসাবশেষ এখনও লক্ষ্য করা যায় যা সাগর রাজার বাসস্থান বলে ধারণা করা হয়। সাগরদীঘি থেকে সামান্য দক্ষিণে এর চেয়েও প্রকান্ড এক দীঘি আছে যার আয়তন হবে প্রায় ২৫ একর। যার নাম বইন্যাদীঘি। সাগর রাজার পুত্র বনরাজ পাল দীঘিটি খনন করেছিলেন।

স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সরকারের কাছ থেকে দীঘিটি লিজ এনে প্রতিবছর মাছ চাষ করে। যার ফলে মাছের খাদ্য, পোল্ট্রির বিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। যার প্রভাবে দীঘির প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে দীঘির তলদেশ। দুই পাড়ের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেখানে উপভোগ করবে বিশুদ্ধ বাতাস আর প্রশান্তির নিঃশাস সেখানে তাদেরকে নাক বন্ধ করে চলতে হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা দীঘির সুনাম শুনে ঘুরতে আসে এবং ফিরে যায় অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা নিয়ে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: