সিলেটে সবচেয়ে বড় মাছের মেলায় চলছে ওপেন জুয়ার আসর ও অশ্লীল নৃত্য

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম

সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মিলন স্থল শেরপুর মাছের জমে উঠেছে। আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নবান্ন ও পৌষসংক্রান্তি এ উৎসব। এবার মাছের মেলায় সরাসরি জুয়ার আসর ও পুতুল নাচের নামে সার্কাসে চলছে নর্তকীদের অশ্লীল নৃত্য। এনিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় জুয়া বসছে, মেলা থেকে মাত্র ১০০/১৫০ গজ দুরে শেরপুর হাইয়ে থানা। পুলিশের ভুমিকা কেন নীরব এই প্রশ্ন সবার মাঝে।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের মতো এবারও মৌলভীবাজারের শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর তীরে শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলার আমেজ।

আজ শনিবার দিনভর চলছে মেলায় মাছের বিকিকিনি। মেলা উপলক্ষে এরই মধ্যে কুশিয়ারাপাড়ে মৎস্য আড়তে আসতে শুরু করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। এদিকে ওপেন জুয়ার আসর বসার কারনে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে। আর পুতুল নাচের নামে নর্তকীদের অশ্লীল নৃত্য যুব সমাজকে বিপথ গামি করছে। জুয়ার আসরে মধ্যে রয়েছে সুতা টান, তিন তাসি, জান্ডিমুন্ডা, ওয়ানটেন ও কাঁচ খেলাসহ আরও অনেক রকম আইটেম।

এ মেলাকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়ন ও নবীগঞ্জ উপজেলার আশপাশের ৫০-৬০টি গ্রামের মানুষের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। দিন-রাতের মেলায় হাজার হাজার লোকের সমাগমে প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ কোটি টাকার মাছ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেচাকেনা চলে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার মিলন স্থলে শেরপুর অর্থনৈতিক জোন তার পাশেই মাছের মেলাকে ঘিরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হামরকোনা, দাউদপুর, ব্রাহ্মণ গ্রাম, নতুন বস্তি, নাদামপুর, বাহাদুরপুর, চানপুর, সুমারাই, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি,মজলিশপুর, ভবানীপুর, মোহাম্মদপুর, পিটুয়া, বনগাও,পাহাড়পুর, দ্বীঘর ব্রাম্ণণ, উমরপুর, আজলপুর, ইসলামপুরসহ বালাগঞ্জ ওসমানী নগর, জগন্নাথপুর ৫টি উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এখন আত্মীয়স্বজনের ভিড়। অনেক প্রবাসীও মেলা উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনে দেশে এসেছেন।

পৌষসংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সদর উপজেলার সত্রস্বতী পরগনার সাধুহাটি গ্রামের জমিদার রাজেন্দ্রনাথ দাম (মথুর বাবু) কুশিয়ারা তীরবর্তী তৎকালীন বৃহত্তর সিলেট অ লের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থল মনুমুখে এ মেলার প্রচলন করেছিলেন প্রায় দেড়শ বছর আগে।

মনুমুখ গ্রামের ৮০ বছর বয়সী সাবু মিয়া মেম্বার বলেন, 'ছোট থেকে শুনে আসছি মথুর বাবু মাছের মেলার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। বাপ-দাদার মুখে মেলায় মাছ বিক্রি করার গল্প শুনেছি।'

মাছের মেলা কমিটির সাবেক সভাপতি সদর উপজেলার অলিউর রহমান বিডি২৪লাইভ.কমকে বলেন, '১৩ জানুয়ারি রাত থেকে ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলার জন্য কম করে হলেও ৩-৪ লাখ টাকা ইজারা মূল্য দিতে হয়। করোনার কারণে গত বছর মাছের মেলা হয়নি। হাওর-বাঁওড়, নদী, বিল ভরাট হওয়ার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগের মতো বড় আকৃতির মাছ না থাকলেও ঐতিহ্যবাহী এই মেলার কদর স্থানীয়দের আবেগের সঙ্গে মিশে আছে।'

মেলায় আসা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান বিডি২৪লাইভ.কমকে বলেন, মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে প্রশাসন। তিনি জুয়া খেলার কথা অস্বীকার করেন।

সিলেট রেঞ্জ এর ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ বিডি২৪লাইভ.কমকে বলেন, আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে নির্দেশ দিয়েছি মাছের মেলার কোন ধরনের জুয়ার আসর বসবে না। যদি কোন ব্যাক্তি আইন অমান্য করে জুয়ার আসর বসান তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: