সিলেটে ২২ জানুয়ারির পেট্রলপাম্প ধর্মঘট শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৬ পিএম

সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ও ৩টি তেল কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শর্তসাপেক্ষে ২২ জানুয়ারি থেকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পেট্রলপাম্প ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। বৈঠকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং সিলেটে জ্বালানি তেল বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপো কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেট্রলপাম্প মালিক সমিতি ও জ্বালানি পরিবেশক সমিতির নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ধর্মঘট স্থগিতের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী এবং সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক জ্বালানি ব্যবসায়ী হুমায়ুন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি জানান, সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের। বার বার আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি সমস্যাটি সমাধানের জন্য। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। সর্বশেষ আমরা আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। তবে আজ (মঙ্গলবার) জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিলেটের পাম্পগুলোর জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকার ভাড়া বহন করার শর্তে ভৈরব থেকে চাহিদামতো তেল আনার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত আশ্বাসের বিষয়টি বাস্তবায়ন হয় কি না দেখবো। যদি হয় তাহলে ধর্মঘটে যাব না। যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে ২২ জানুয়ারি থেকেই ধর্মঘট পালন করা হবে।

সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। চাহিদার অর্ধেক জ্বালানিও সরবরাহ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন কোম্পানিগুলো। রেলের ওয়াগন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি তেল না আসায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

গত কয়েক মাস সিলেটের ব্যবসায়ীরা ভৈরব থেকে জ্বালানি এনে পাম্পগুলো সচল রেখেছিলেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা সংকট নিরসনে আন্দোলনের পথ বেছে নেন। এ অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি সভা করে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে সিলেটের পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। তবে শর্তসাপেক্ষে মঙ্গলবার তারা সে ধর্মঘট স্থগিত করেন।

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সিলেট বিভাগে ১১৪টি পাম্পের মাধ্যমে জ্বালানি তেল বিক্রি করা হয়। বিভাগে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার ডিজেল এবং ৩ লাখ লিটার পেট্রল ও অকটেনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ওয়াগন সংকটের কারণে গড়ে প্রতিদিন ডিজেল, অকটেন ও পেট্রল মিলিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ৫-৬ লাখ লিটার। সপ্তাহে যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে তেলবাহী একটি লরি আসার কথা সেখানে আসছে মাত্র ২-৩ দিন। এ কারণে সিলেটে দিন দিন জ্বালানি তেলের সংকট বেড়েই চলছে।

এ অবস্থায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা এতদিন ক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিজ খরচে ভৈরব থেকে জ্বালানি তেল এনে বিক্রি করছিলেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাম্প মালিকদের অব্যাহতভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আন্দোলনকারীরা বলেন, এক সময় সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া কনডেনসেড শোধন করে সিলেটেই উৎপাদন হতো জ্বালানি তেল। কিন্তু সিলেটের শোধনাগারগুলোতে উৎপাদিত তেলের ‘মান ভালো নয়’ অজুহাতে ২০২১ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব শোধনাগার। পরে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে শুধু রশিদপুরের শোধনাগারটি চালু হলেও বাকিগুলো এখনো বন্ধ। সিলেটে জ্বালানি তেল সংকটের একমাত্র কারণও এটি।

তারা বলেন, অবিলম্বে সিলেটের বন্ধ অন্য তেল শোধনাগারগুলো চালু করতে হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: