ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা দুই গুণ

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম

আড়াইশ শয্যার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে বাড়ছে শিশুরোগীর সংখ্যা। গত চারদিনে দুই শতাধিক শিশু বিভিন্ন অসুখ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এসব রোগীর মধ্যে জ্বর, ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এক দিনেই হাসপাতালে ৪০/৫০ শিশুরোগী ভর্তি হচ্ছে। পুরো শিশু ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে রোগী দুই গুণ। শয্যা সংকটে হিমশিম রোগী ও স্বজনরা।

ঠাকুরগাঁও সরকারি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, শিশু বিভাগে প্রচুর রোগী রয়েছে। শয্যা সংকটে হাসপাতালের করিডোর এবং বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডেই রোগী আছে দুইশ’র বেশি। এক সপ্তাহ আগে এই ওয়ার্ডে রোগী আরও বেশি ছিল। হাসপতালটি ২৫০ শয্যার কিন্তু দৈনিক ভর্তি থাকছেন ৪০০ থেকে প্রায় ৪৫০ জন রোগী।

শিশু রোগীর মধ্যে এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সির সংখ্যা বেশি। ঠান্ডাজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়েছে হচ্ছে তারা। জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে হঠাৎ প্রচণ্ড শীত পড়ায় গত কয়েক দিনে বৃদ্ধসহ শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে এমন রোগীর সংখ্যা দুইশ’র বেশি। দেখা গেছে, রোগীর চাপে বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডের কোথাও ঠাঁই নেই। শিশু ওয়ার্ডের সবকটি বিছানা পরিপূর্ণ হয়ে মেঝেতেও রোগীদের জন্য বিছানা পাতা হয়েছে। এসব রোগী জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি এবং নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। এ ছাড়া অনেক অভিভাবক প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা শেষে শিশুদের নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। একইভাবে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন বয়স্করাও।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে ফারুক ইসলাম ও তার স্ত্রী এসেছেন ১৫ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে। ফারুক ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বেশ কয়েকদিন থেকে বাচ্চাটা অসুস্থ তাই গত ১৫ জানুয়ারি এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করি। এখন সে কিছুটা সুস্থ্য।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়ন থেকে অসুস্থতার জন্য শাহিনা তার ১৫ দিন বয়সি কন্যা খাদিজাকে ভর্তি করান। তিনি বলেন, ‘আমি কাশ ও সর্দিতে আক্রান্ত ও আমার কন্যা নিউমোনিয়া আক্রান্ত। গত ১০ জানুয়ারিতে হাসপাতলে শিশু ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করি কিন্তু রোগির অতিরিক্ত চাপ থাকায় বেড পাইনি। তাই ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’

দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গণপূত গ্রামের সাজেদুল করিম বলেন, আমার আড়াই মাসের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। ঠান্ডার কারণে সর্দি ও এলার্জি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দুইদিন থেকে ভর্তি আছি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের শাহানাজ পারভিন নামে এক গৃহবধু বলেন, ‘৩ দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আমার ছেলেকে নিয়ে। আগে যদিও শুনেছি এখানকার বেখিয়ালির কথা। তবে এখন আগের থেকে এখানকার চিকিৎসা অনেক ভালো ও উন্নত হয়েছে। তার পরেও এখানে বেডের সমস্যা রয়েই গেছে। বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যদি বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হতো তাহলে আমাদের জন্য আরো ভালো হতো।’

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ সাজ্জাত হায়দার শাহিন বলেন, ‘কয়েক দিনে হাসপাতালে শিশুরোগীর চাপ বেড়েছে। আমাদের এখানে শিশু ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ৪৫ জনের হলেও বর্তমানে প্রতিদিন দুই শতাধিক শিশু ভর্তি থাকছে। শীতের সময় বিশেষ করে শিশু ও নবজাতকের ঠিকমতো যত্ন না নেওয়ার ফলে এধরণের সমস্যা হয়ে থাকে।

আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ নাঈম মোঃ মিনহাজ কৌশিক বলেন, ‘হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ জনের হলেও বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ জনের মত রোগী ভর্তি থাকছেন। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে জনবল সংকট থাকার কারনে। আগে ১০০ শয্যার হাসপতালে যে জনবল ছিল এখন এটি ২৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও শুধু কিছু সংখ্যক আউটসোশিং জনবল বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে এখানকার কার্যক্রম চলছে। সীমিত সামর্থের মধ্যেই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: