সাত বছর পর জানা গেল মেয়ের খুনি বাবা: বনজ কুমার

প্রায় ১১ বছর আগে ২০১২ সালে ভালোবেসে নাসিরুদ্দিন বাবুকে বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের পারুল আক্তার। কিন্তু তার পরিবার এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। ফলে স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। মাঝে সংসারের মনোমালিন্য দেখা দেওয়ায় বাবাকে ফোন করেন। বাবা তাকে অন্যত্র ভালো ঘরে বিয়ে দেবেন- এই প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালে জয়পুরহাট নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাতে একটি নদীর ধারে নিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। এরপর অন্যদের সহযোগিতায় হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার পর মেয়ের লাশ ফেলে দেন নদীতে।
পরে এলাকায় এসে সেই জামাইয়ের নামে মামলা করেন। কিন্তু মামলায় থানা পুলিশ থেকে শুরু করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন মামলাটি হাতে পাওয়ার পর তদন্তের মোড় ঘুরে গেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, পারুল আক্তার হত্যা মামলায় স্বামী নয়, তার বাবাই সম্পৃক্ত। এছাড়াও জড়িত রয়েছেন আরও কয়েকজন। এ ঘটনায় পারুল আক্তারের বাবা কুদ্দুস খাঁ (৬০) ও তার বন্ধু মোকা মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
রোববার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান ড. বনজ মজুমদার। পিবিআই প্রধান বলেন, বাবা কুদ্দুস খাঁ অপমানিত হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। মূলত জামাইর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি নিজ মেয়েকে হত্যা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কুদ্দুস খাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোকাদ্দেস ওরফে মোকা মণ্ডল তাকে সহযোগিতা করেন। এই মোকা মণ্ডল একজন দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। তার নামে সেই এলাকায় থানায় মামলা রয়েছে।
বনজ কুমার বলেন, পারুলের বাবা জামাইকে শায়েস্তা করার জন্য মামলা করে বারবার নারাজি দিয়েছেন। একসময় তার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল, কিন্তু এখন ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। এ ঘটনায় কুদ্দুস খাঁ এক পর্যায়ে অনুতপ্ত হন। তিনি বুঝতে পারেন জামাই নয়, তার মেয়ের কারণে তিনি অপমানিত হয়েছেন। মেয়ে তার কথা শুনতো না, ঠিকমতো পড়ালেখা করেনি এবং তার মতের বাহিরে গিয়ে পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে। এজন্য মেয়ের ওপর ক্ষোভ ছিল।
পিবিআই প্রধান জানান, মেয়ের কারণে অপমানিত হয়ে কুদ্দুস খাঁ জামাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই মেয়েকে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নির্জন নদীর ধারে নিয়ে যান। মেয়ের ওড়না দুই টুকরো করে তার হাত-পা বাঁধেন এবং তাকে নদীতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এই কাজে সহযোগিতা করেন তার বন্ধু মোকা মণ্ডল।
পিবিআই জানায়, ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট নাছির উদ্দিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে অপহরণ মামলা করেন মেয়ের বাবা। সেই মামলাটি চলতেই থাকে। কিন্তু থানা পুলিশ থেকে শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কেউ এই ঘটনায় কোন ব্যক্তি জড়িত তা বের করতে পারেনি। থানা পুলিশ ও ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করে ছেলে-মেয়ের প্রেম থাকার বিষয়টি প্রমাণ পেলেও পারুলের কোনো হদিস পায়নি। ফলে তারা আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হন না কুদ্দুস খাঁ। ঢাকায় মামলা করলে হয়ত তিনি জামাইকে শাস্তি দিতে পারবেন- এই বিশ্বাসে সবশেষ গেল নভেম্বরে ঢাকার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার আবেদন করেন। পরে আশুলিয়া থানা একটি মামলা হয়। সেই মামলার তদন্তভার আসে ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের কাছে। পিবিআই খুব অল্প সময়ে এই ঘটনা তদন্ত করতে সক্ষম হয় এবং তদন্তে উঠে আসে মেয়ের বাবা কুদ্দুস খাঁ তার মেয়েকে হত্যা করে জামাইকে ফাঁসানোর জন্য অপহরণ মামলা করে বারবার আদালতে নারাজি দিয়েছেন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: