চাঁপাইনবাবগঞ্জে জরিমানার ১৫ দিন পর চালু অবৈধ ড্রাম চিমনির ইটভাটা

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবৈধ ড্রাম চিমনির ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানার ১৫ দিন পরই আবারও চালু হয়েছে ভাটার সকল কার্যক্রম। ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ভাটার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আবারও চালু হয়েছে ইটভাটা।

অভিযোগ রয়েছে, কাঠ পোড়ানোর পাশাপাশি কয়েক মিটার উঁচু ড্রামের তৈরি চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের আরাজি ঝুড়িবোনা এলাকার ইফতেখার উদ্দিন শাহিনের ইটভাটায়। এতে অনেক নিচ দিয়ে ধোয়া বের হয়ে আশেপাশের আমগাছ ও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

স্থানীয় বাসিন্দা, ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ড্রাম চিমনি, কাঠ পোড়ানো, অনুমোদন, পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স না থাকায় গতবছরের ২১ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এসব অপরাধে ইটভাটাকে লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক তৌফিক আজিজ।

ইটভাটার শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট এসে ইটভাটা ভেঙ্গে দিতে নির্দেশনা দেয় এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। পাশেই মালিকের আরেকটি ভাটা রয়েছে। ড্রাম চিমনির ভাটায় লাভ অনেক বেশি। তাই মালিক আবার এই ভাটা চালু করেছে। এর বেশি কিছুই জানি না। কারন আমরা দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। মালিক যেভাবে যা করতে বলে, তাই করি।

ইটভাটার ফায়ার ম্যান (আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করে) সাদিকুল ইসলাম জানান, এমন ভাটা হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে। কারন এখন সব ভাটার চিমনি ইট দিয়ে গাঁথা। যেগুলো কয়েকশ ফিট উঁচু। অন্যদিকে, এখন যেসব জিগজ্যাগ ভাটার চিমনি (ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা) যেগুলো তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লাগে। অন্যদিকে, ড্রাম দিয়ে এই টিনের চিমনি কয়েকদিনের মধ্যেই তৈরি করা সম্ভব।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, ২০ বছর আগে এমন আদিম (এনালগ) ভাটা ছিলো। কিন্তু এসব ভাটা প্রশাসন উঠিয়ে দিয়েছে এবং নতুন করে আর করতেও দেয় না। কারন এগুলোর চিমনি অনেক নিচুতে থাকে। ফলে স্থানীয় বসতবাড়ি ও গাছপালা, ফসলে ধোঁয়ার কারনে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মাসখানেক আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করলেও তারা আবারও তাদের একই কাজ শুরু করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাটামালিক বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করছি। অথচ এই সময়ে এসেও এমন ড্রাম চিমনির ইটভাটা নতুন করে চালু হয়েছে। এই ভাটায় কয়লা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ এখানে শতভাগ খড়ি পোড়াতে হবে। প্রশাসন অভিযান করার পরেও কিভাবে আবারও চালু হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। জেলায় গত এক দশকের মধ্যে এটিই প্রথম এমন ভাটা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইটভাটার মালিক ইফতেখার উদ্দিন সাহিনকে ভাটায় পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে অভিযানের কথা স্বীকার করেন তিনি। এসময় তিনি জানান, অভিযানে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে আগামীতে এই ইটভাটাকে জিগজ্যাগ (ইটের বড় চিমনি) ভাটা করা হবে। তাই আবারও চালু করেছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক তৌফিক আজিজ মোবাইল ফোনে জানান, 'অবৈধভাবে ড্রাম চিমনির ইটভাটা পরিচালনার অপরাধে এক লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে পুনরায় একই উপায়ে ইটভাটা চালু হলে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: