টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সিলেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:২৯ পিএম

বংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উত্তেজনা পূর্ণ ম্যাচে সিলেটের কাছে ২ রানে পরাজিত হয়েছে বরিশাল। পেন্ডুলামের মতো দোলতে থাকা ম্যাচে শেষ হাসি হাসলো সিলেট। মিরপুরে চার, ছয়ের বন্যা বইয়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার চমক জাগানিয়া ইনিংসে সিলেটের স্কোরবোর্ডে ১৭৩। এরপর আমির, রাজাদের দারুণ বোলিংয়ের সৌজন্যে ২ রানের স্বস্তির জয় তুলে নিল সিলেট স্ট্রাইকার্স।

চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েছিলেন শান্ত। তবে বল সংকটে তাকে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় ৮৯* নিয়ে। শান্তর ফিফটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স পায় ১৭৩ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। বরিশালের ইনিংস থামে ১৭১ রানে। স্ট্রাইকার্সের জার্সি গায়ে আজ বিপিএলে অভিষেক হয় পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও ইংলিশ ব্যাটার টম মুরসের। টস জিতে আগে বোলিং নিয়ে বরিশালের দলপতি সাকিবের বাজিমাত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে এসেই আগুন ঝরালেন পাক পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। হ্যাটট্রিক না করতে পারলেও করেছেন ওভার হ্যাটট্রিক।

প্রথম ডেলিভারিতেই সিলেটের ওপেনার জাকির হাসানকে করেন বোল্ড। ওভারের পঞ্চম বলে তৌহিদ হৃদয়কে ফেরান ক্যাচ বানিয়ে। শেষবলে মুশফিকুর রহিমকে ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। ইনজুরি কাটিয়ে বিপিএলে ফিরে তৌহিদ হৃদয় করেন কেবল চার। আর গোল্ডেন ডাক হয়ে সাজঘরে ফেরত যান ইনফর্ম জাকির ও মুশফিক। ওয়াসিমের আগুন বোলিংয়ের সামনে পড়ে স্কোরবোর্ডে ১৫ রান উঠতেই সিলেট স্ট্রাইকার্স হারায় তিন ব্যাটারকে। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিষেক ক্যাপ পড়া টম মুরসের ব্যাটে স্বস্তি ফেরে সিলেট শিবিরে।

ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট হেসেছে আজও। দারুণ সব স্ট্রোক্স খেলে ৪৮ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। এবারের বিপিএলে শান্তর ব্যাট থেকে আসলো দ্বিতীয় পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। তবে এরমাঝেই উইকেট হারান ৪০ রানে থাকা মুরস। সাকিবকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বিজয়ের হাতে হয়েছেন স্টাম্পড। ভাঙে শান্তর সঙ্গে ৭১ বলে গড়া ৮১ রানের জুটি।

এরপর থিসারা পেরেরাকে নিয়ে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে লড়াই চালান শান্ত। ব্যক্তিগত ৭০ রানে নতুন জীবন পেয়ে শান্ত হয়ে উঠেন আরও ভয়ংকর। ইনিংসের শেষ ওভার করতে এসে কামরুল ইসলাম রাব্বির ওয়াইডের হ্যাটট্রিক। ৯ বলের লম্বা এক ওভার করলেও রাব্বি তুলে নেন ২১ রানে থাকা পেরেরাকে। ভাঙে শান্ত ও পেরেরার মধ্যকার ৬৮ রানের অনবদ্য জুটি। এরমধ্যে শান্তর অবদান ১৮ বলে ৩৭ রান।

শেষপর্যন্ত ৮৯ রানের হার-না-মানা ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শান্ত। দলকে এনে দেন ৫ উইকেটে ১৭৩ রান। শান্ত ৮৯ রানের ইনিংস সাজান ১১ চার ও ১ ছয়ের সাহায্যে। এবারের বিপিএলে বাংলাদেশী ব্যাটারদের মধ্যে শান্তর এই ইনিংসটিই সাকিবের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। তবে সাকিব অবশ্য ৮৯* রান করেন মাত্র ৪৩ বলে।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ইনিংসের ২য় ওভারে মাশরাফি মর্তুজার প্রথম বলেই ক্যাচ তুলেন বরিশালের আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। সার্কেলের মধ্যে সহজ ক্যাচ হলেও তালুবন্দি করতে পারেননি জাকির হাসান। এরপর ব্যক্তিগত ৩০ রানে আমিরের বলে ক্যাচ তুলেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। এবার ক্যাচ ফেলেন তৌহিদ হৃদয়। শেষপর্যন্ত তানজিম হাসান সাকিব এসে ফেরান সাইফকে। দারুণ খেলতে থাকা সাইফকে ক্যাচ বানিয়ে বিপিএলে নিজের প্রথম উইকেটের দেখা পান সাকিব, তাও আবার প্রথম ওভারেই।

সাইফ হাসানের ৩১ রানের ইনিংসের পেছনে ৪টি বিশাল ছয়। যার তিনটিই হাঁকিয়েছেন মাশরাফির দুই ওভারে, বাকি একটা মোহাম্মদ আমিরের বিপক্ষে। সাইফকে ফিরিয়ে দেওয়া তানজিম সাকিব পরের ওভারে এসে বিদায় করেন তিনে নেমে তিন করা এনামুল হক বিজয়কে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ১৩ খরচায় তরুণ সাকিবের ঝুলিতে দুই উইকেট।

ইনিংসের ১৪তম ওভারে এসে রেজাউর রহমান রাজা মাত্র দুই রান খরচায় পকেটে নেন জোড়া শিকার। দুই সেট ব্যাটার জাদরান ও সাকিবকে বিদায় করে ম্যাচে ফেরান সিলেটকে। ওভারের তৃতীয় বলে রাজা ভাঙেন ইব্রাহিম জাদরানের স্টাম্প। আর শেষ বলে উড়িয়ে দেন সাকিবের অফ স্টাম্প। ইব্রাহিম জাদরান ৩৭ বলে করেন ৪২, আর সাকিব রীতিমতো তান্ডব চালিয়ে ১৮ বলে খেলেছেন ২৯ রানের ইনিংস।

মাশরাফির করা ১৬তম ওভারের শেষ তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে করিম জানাত ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন সিলেটকে। প্রথম দুই ওভারে মোট ২১ রান খরচ করা ম্যাশ তৃতীয় ওভারেই দেন ২১ রান। ৩ ওভার শেষে মাশরাফির সঙ্গী ৬ ছয়। মাশরাফি ২১ রান খরচ করে গেলে পরের ওভারে এসে মাত্র ১ রান খরচায় ১ উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ আমির। ম্যাচের ভাগ্য ফিরে আসে সিলেটের ঘাড়ে।

১৮তম ওভারে সাকিব এসে দেন ১৮ রান। ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আসে ফরচুন বরিশালের হাতে। পরের ওভারে আমির এসেই বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ৭ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। এই ওভারের পঞ্চম বলে মিরাজের দারুণ এক জয়ে শেষ ওভারে বরিশালের দরকার হয় ১৫ রানের। ইফতিখারের বিপক্ষে বোলিংয়ে রাজা। ওভার শুরু ওয়াইডে, পরের বল আকাশে তুলে উইকেট হারান ১৭ রানে থাকা ইফতিখার আহমেদ। এরপরের বলেই রান আউটে কাঁটা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর তাতেই যেন শেষ হয়ে যায় বরিশালের জয়ের স্বপ্ন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: