রামুতে উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানকে মারতে গেলেন ইউপি চেয়ারম্যান!

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৬ পিএম

কক্সবাজারের রামুতে ভিজিডি কার্ডের তালিকায় নাম দেয়া ও কর্তনকে কেন্দ্র করে উপজেলা সমন্বয় সভায় বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজের পর মারতে উদ্যোত হয়েছে এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। এনিয়ে সভায় চরম হট্টগোল হয়। পরে পুলিশ এনে পরিস্থিতি সামাল দেন উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) রামু উপজেলা পরিষদ মিলনাতায়নে মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেত্রী আফসানা জেসমিন পপি ও ফাতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টোর মধ্যে এঘটনা ঘটে।

সভায় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান পপি ভিজিডি কার্ডের তালিকায় তার দেওয়া তিন উপকারভোগীর নাম কর্তন করার অভিযোগ তুলে ফতেখাঁরকলের চেয়ারম্যান ভুট্টোর বিরুদ্ধে সভায় বক্তব্য দেন। এনিয়ে উভয়ের মাঝে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ভুট্টো পপিকে অশ্লীল ভাষায় হুমকি দিয়ে তার নিজস্ব লোকজনকে ফোন দিলে তার ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকসহ বিভিন্ন লোকজন হাতপ লাঠি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে জড়ো হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেন।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি জানান, তিনি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে ভিজিডির তালিকায় তিনজন হত দরিদ্রের নাম জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার দেয়া ঐ উপকারভোগীর নামগুলো তালিকা থেকে কেটে দেন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো। বিষয়টি সমন্বয় সভায় অভিযোগ উত্তাপন করলে ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে বক্তব্য চলাকালীন সময়ে আমাকে তুই-তোকারি করে অশোভন ও অমার্জিত আচরণ করেন। এক পর্যায়ে মাইক্রোফোন ছুড়ে মারতে উদ্যত হন। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফাসহ সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ কিংকর্তব্যবিমুঢ হন। পরে উপস্থিত সকলের অনুরোধে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পপি কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো মানসিকভাবে তাকে হেনস্থা করে আসছিলেন। এমনকি গত কয়েকদিন আগেও উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ও এক জনপ্রতিনিধির সামনেও অশালীন বাক্যে বাজে ইঙ্গিত দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এটি চলে এলেও এলাকার বড়জন হিসেবে তা মাথায় নিয়নি।

ভাইস চেয়ারম্যান পপির দাবি, এক সময় আমি ভুট্টোর পরিষদে মহিলা মেম্বার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেছিলাম। তখন ভুট্টো আমাকে উত্যক্ত করাসহ অশালীন কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে কু-প্রস্তাব দিতেন। এতে রাজি না হওয়ায় তিনি আমার উপর ক্ষেপে রয়েছেন তা আমার জানা ছিলনা।

অভিযুক্ত ফতেখাঁরকুলের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, তিনি এক সময় আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। তাকে মাহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমিই নির্বাচিত করেছি। ভিজিডি তালিকায় যে তিন জনের নাম তিনি দিয়েছেন তারা সবাই আর্থিকভাবে সচ্চল তাই তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় একটু বাকবিতন্ডা হয়েছে সত্যি- তবে, তা আবার মিটমাট হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, চারদলীয় জোট সরকার আমলে চেয়ারম্যান ভুট্টো বিএনপির নেতা হিসেবে দাপটে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভোল্ট পাল্টে স্থানীয় এমপি লীগে আসেন। এখন আওয়ামী লীগ হিসেবে আগের মতো দাপট দেখিয়ে এলাকায় চলা-ফেরা করেন। এলাকায় তার একটি ইটভাটা রয়েছে। কোথাও কোন ত্রাস সৃষ্টির প্রয়োজন হলে নিজস্ব লোকজনের পাশাপাশি ভাটার শ্রমিক এনে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। আজকের ঘটনায়ও অসংখ্য শ্রমিক লাঠিসোটা নিয়ে এসেছিলেন। তখন একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

মাসিক সমন্বয় সভায় এমন অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয় মন্তব্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, এরকম একটি অনাকাঙ্কিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: