শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যখন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতারণার কারখানা

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:২০ পিএম

সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত বেসরকারী রেজিষ্ট্রেশন বিহীন নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যখন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতারণার কারখানা। 'হাসপাতাল না সবজি ক্ষেত', 'উই ওয়ান্ট মাইগ্রেশন', 'বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট', 'প্রতারণা আর না আর না', এমন নানা স্লোগানে ভরা চারপাশের প্রায় প্রতিটি দেয়াল। পুরো চত্তর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য হ্যান্ডবিল ও লিফলেট। দীর্ঘদিন যাবত এই মেডিক্যাল কলেজটির শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশনের দাবীতে নানা আন্দোলন করে আসছে। এমনকি এই দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমে একাধিকবার সড়ক অবরোধও করেছেন তারা।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজের মেইন গেইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিশ টানিয়ে রেখেছে। এছাড়া হাসপাতাল, ক্যান্টিন ও প্রশাসনিক ভবনের প্রতিটি জানলা ও দড়জার কাঁচ ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এসময় পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে কেবলমাত্র আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় কলেজটিতে ২০১৭-২০১৮ সেশনে ভর্তিকৃত ৪৫ জন শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে করে আসছে তাদের দাবী ভর্তির ৩ মাসের মাথায় তারা জানতে পারেন এই কলেজের বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিষ্ট্রেশনসহ অন্যান্য অনুমোদন নেই। সেসময় তারা বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তাদের জানানো হয় দ্রুতই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু এতদিনেও এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারা আন্দোলনে নামে। এসময় তারা ক্লাশ পরীক্ষা বর্জনসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেন পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন এবং উচ্চ আদালতে মাইগ্রেশনের রীট আবেদন করেন পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দেয় আদালত। তবে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই মাইগ্রেশন ঠেকাতে একটি রিট দায়ের করে। এতে আটকে যায় শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া। ২০১৬ সালে নীতিমালা না মানায় এই কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের জন্য আদালতে রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে প্রতিষ্ঠানটি। এসময় শিক্ষার্থী প্রতি ভর্তির সময় নেয়া হয় ১৫ লাখ করে টাকা করে। এবং টিউশন ও হোস্টেল বাবদ প্রতি মাসে ফি নেয়া হতো ১১হাজার টাকা করে।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইমরান খান বলেন, বাবা-মা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ডাক্তার হওয়ার আশায় আমাদের এখানে ভর্তি করিয়েছিলো। কিন্তু তারা তো জানতনা যে এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না এটা প্রতারণার কারখানা। নামে মেডিকেল কলেজ কিন্তু কাজের কিছু নাই। নেই চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, নেই ভালো কোনো ডাক্তার। এমনকি রোগীও থাকেন না। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ মিথ্যা আশ্বাস ও আদালতের কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে আমাদের ভর্তি করেন।

তিনি আরও বলেন, প্রথম বর্ষে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন এনে দেবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন এনে দিতে পারেনি। কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা থেকেও তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। তাই আমরা ৪৫জন অসহায় শিক্ষার্থী মাইগ্রেশনের দাবীতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ আন্দোলন করে যাবো।

রোকেয়া আক্তার লিজা নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বহুকষ্টে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে আজ প্রতারণার শিকার। তাই এখন বাধ্য হয়ে মাইগ্রেশনের দাবী আদায়ে আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ দয়াকরে দ্রুত এ সংকট নিরসন করে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনে ফিরিয়ে দিন।

এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়৷

এ ব্যাপারে নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস রুমি বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেকদিন যাবতই মাইগ্রেশনের দাবীতে আন্দোলন করছে। শুনেছি মাইগ্রেশনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আপত্তি রয়েছে। তবে আশা করছি বিষয়টি দ্রুতই সমাধান হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: