বাসচালকের ছদ্মবেশে জাহাঙ্গীরের আইসের কারবার

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০২ পিএম

২০১৫ সাল থেকেই ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন মো. জাহাঙ্গীর আলম। তবে ইয়াবার তুলনায় আইসের দাম বাড়ায় ও লাভ বেশি হওয়ায় ইয়াবার সঙ্গে আইস কারবারেও জড়ান তিনি। আগে টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবা-আইস ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। পরবর্তীতে নিজেই টেকনাফ থেকে ইয়াবা-আইস ঢাকায় এনে বিক্রির জন্য একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন জাহাঙ্গীর।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পেশায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস চালক জাহাঙ্গীর। বাস চালানোর আড়ালে মূলত ইয়াবাসহ আইসের চালান নিয়মিত কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় আনতেন তিনি।মাদক কারবারে জড়িত থাকায় ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চারবার গ্রেপ্তার হয়েছিল জাহাঙ্গীর।

তবে তার মাদক ব্যাবসা থেমে থাকে নি। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ইয়াবা থেকে আইসের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় আইস পাচার ও বিক্রি জন্য আলাদা সিন্ডিকেট রয়েছে জাহাঙ্গীরের। এর জন্য জন্য সহযোগী মেহেদী হাসানকে ব্যবহার করতো জাহাঙ্গীর।রাজধানীর যাত্রাবাড়ী সায়দাবাদ এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথ বা ভয়ংকর মাদক আইসের বড় চালান জব্দসহ মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মেহেদি হাসানকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ঢাকা গোয়েন্দা ইউনিট। জাহাঙ্গীর টেকনাফকেন্দ্রিক আইসের মূল কারবারি বলে দাবি ডিএনসি গোয়েন্দা শাখার।

গতকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে গেন্ডারিয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দক্ষিণ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আল আমিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে গোপন সংবাদে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) মুহাম্মদ রিফাত হোসেনের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর সায়দাবাদ হাজী বোরহান উদ্দিন টাওয়ার সংলগ্ন আলকারিম হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন জাহাঙ্গীর ও তার সহকারী মো. মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে তাদের দেহ তল্লাশি করে আমদানি নিষিদ্ধ ও ভয়ংকর মাদক এক কেজি ৭০০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত আইসের বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। যার প্রতি গ্রাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার মাধবপুর বাজারের মৃত আলী আশরাফের ছেলে। অপর গ্রেপ্তার মেহেদি হাসান বাগেরহাট সদরের মৃত আলতাফ শেখের ছেলে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, টেকনাফ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আইসের চালান রাজধানীতে নিয়মিত আনতেন গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর। তিনি আইস কারবারের মূলহোতাও। পাশাপাশি তিনি সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস চালকও। মূলত বাস চালানোর আড়ালে তিনি এসব মাদক কক্সবাজার টেকনাফ হয়ে ঢাকায় নিয়ে আসতেন।

মাদক কারবারে সিদ্ধহস্ত জাহাঙ্গীর সম্পর্কে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, বাস চালক হলেও জাহাঙ্গীরের মূল পেশা মাদকের কারবার। ২০১৫ সাল থেকে ইয়াবা ও ২০২০ সাল থেকে আইস পাচারের সঙ্গে জড়িত। আগে টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবা-আইস ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। পরে নিজেই টেকনাফ থেকে ইয়াবা আইস ঢাকা এনে বিক্রির জন্য একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। ইয়াবা থেকে আইসের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় আইস পাচার ও বিক্রি জন্য আলাদা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে জাহাঙ্গীর। পরে তার সহযোগী গ্রেপ্তার মেহেদী হাসানের মাধ্যমে সরাসরি মাদক সেবনকারীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পরিচালক আল আমিন জানান, আইস মূলত উচ্চমূল্যের মাদক। এ কারণে অভিজাত এলাকার ক্রেতারাই এটি বেশি সেবন করে। আইস ঢাকার ভেতরেই বেশি ব্যবহার হয়। গ্রাম বা মফস্বলে এখনো এর বিস্তার ঘটেনি। তবে এ ধরনের মাদক যেন সারা দেশে মাদক কারবারিরা পাচার বা বিক্রি করতে না পারে সেজন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ যাবতকালে সর্ববৃহৎ আইসের চালান উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: