চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্ববৃহৎ গুড়ের হাট, রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫০ এএম

শীত এলেই জমে উঠে চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজারের খেজুর গুড়ের হাট। বলা হয় দেশের সর্ববৃহৎ খেজুর গুড়ের হাট বসে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে গাছিরা খেজুর গাছের রস থেকে গুড় উৎপাদন করে, এসব গুড় বিক্রির জন্য প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে গুড়ের ভাঁড় নিয়ে হাজির হয় গুড় উৎপাদনকারী কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুড় ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন গুড় কিনতে। গুড় বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের প্রাচীন।

চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার খেজুর গাছ। এসব গাছ থেকে রস আহরণের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন খেজুরের গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এ গুড়ের হাট থেকে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করা হয়ে থাকে। খেজুর গুড়ের ব্যপক চাহিদা থাকার পরও প্রতিবছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমার কারণে গুড় উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় গুড় উৎপাদন কম হওয়ায় বিগত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুর গুড়ের দাম বেড়েছে। সুনাম থাকায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে এ জেলায় উৎপাদিত খেজুর গুড়।

ছবি: প্রতিনিধি

স্থানীয় কয়েকজন গুড় বিক্রেতা জানান, খেজুর গাছ কাটা, খেজুর গাছে ভাড় বাধা এবং সেই ভাড় থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা অনেক সময় সাপেক্ষ্য এবং খুব কষ্টের কাজ। যে পরিমান কষ্ট হয় গুড় উৎপাদনে সে পরিমান এখন আর লাভ হয় না। কিছু অসাধু গুড় ব্যবসায়ী এবং চাষী অধিক লাভের আশায় গুড়ে চিনি মেশায় এবং বিভিন্ন পন্থায় ভেজাল করে কম দামে গুড় বিক্রি করে। সঠিক দাম না পেয়ে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।

গুড় কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, এ গুড়ের হাটের সুনাম দেশ ব্যাপি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন ভালো গুড়ের আশায়। তবে অনেকে এখন গুড়ে ভেজাল করছেন। যার ফলে বাইরের জেলায় সুনাম টা ক্ষুন্ন হয়ে চাহিদা কমে যাচ্ছে। গুড় যাচাই বাছাই করে কেনাও অনেক কষ্ট স্বাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এ বছর গুড়ের আমদানি কম থাকায় অন্য বছরের তুলনায় গুড়ের দাম বেশি। এবছর ১০/১২ কেজি ওজনের এক ভাড় গুড় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়।

পাবনা জেলার গুড় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে সরোজগঞ্জের এ হাটে প্রতি মৌসুমে গুড়ের ব্যবসা করি। এ হাট থেকে গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। এ হাটে আগে যে গুড় পাওয়া যেত সে মানের গুড় এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। গুড়ের সঠিক মান নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে এ হাটের ঐতিহ্য হারাবে’।

পাশের জেলা ঝিনাইদহ থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারী গুড় বিক্রি করে থাকি। এখানে কিছু পরিচিত গুড় উৎপাদনকারী চাষী আছে। তারা আমাকে চিনিমুক্ত গুড় দেয়। চিনি মুক্ত গুড়ের কারণে আমার গুড়ের অনেক চাহিদা এবং ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি’।

সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটের ইজারাদার লিলুয়ার রহমান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার খেজুরগুড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ভেজালমুক্ত সুস্বাদু গুড়। সারা দেশেই চুয়াডাঙ্গার খেজুর গুড়ের ব্যপক চাহিদা থাকায় এ হাট থেকে খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে এহাটে অন্তত কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হয়ে থাকে। আমরা ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্বিগ্নে হাট পরিচালনা করে থাকি’।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোহা. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরোজগঞ্জের খেজুরের গুড়ের হাটকে বলা হয় দেশের সর্ববৃহৎ খেজুর গুড়ের হাট। এখানে থেকে কৃষকদের উৎপাদিত গুড় খুব সহজেই ভালো দামে বিক্রয় করতে পারে। চুয়াডাঙ্গার উৎপাদিত গুড় অত্যান্ত সুস্বাদু হওয়ার কারণে সারা দেশ থেকেই পাইকারী গুড় ব্যবসায়ী এখানে থেকে গুড় ক্রয় করে নিয়ে যান। কৃষকদের উৎপাদিত গুড়ের বাজারজাত করণের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করে থাকি। কোন প্রকার সমস্যা হলে তা আমরা তাৎক্ষনিক সমাধান করে দিই’।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: