চলামান থাকবে প্রবাসীদের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫১ এএম

চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ হলেও প্রবাসীদের বিশেষ সুবিধা দিতে প্রবাসীদের ভোটার হালনাগাদ সেবা অব্যাহত রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন সহায়তার শাখার মোঃ নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নির্দেশনাটি মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। ইতিমধ্যে নির্দেশনার অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরেও পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচীতে সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে যেসব ভোটার ১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে ভোটার হিসেবে যোগ্য হয়েছেন তাদের খসড়া ভোটার তালিকা ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকার উপর দাবী, আপত্তি ও সংশোধনী বিষয়ে ভোটার তালিকা বিধিমালা-২০১২ অনুযায়ী সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষের (রিভাইজিং অথরিটি) কার্যক্রম নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চলমান রয়েছে।

ওই কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রবাসী ব্যক্তিগণের চলমান প্রক্রিয়ায় যথারীতি নতুন ভোটার নিবন্ধন ও আপলোড কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর ১৫ ধারা মোতাবেক মাননীয় নির্বাচন কমিশন সদয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এই অবস্থায়, মাননীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবাসী ব্যক্তিগণের নতুন ভোটার নিবন্ধন ও আপলোড কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হলো।

ভোটার তালিকা আইনের ১৫ ধারায় যা রয়েছে-কমিশন যে কোনো সময় কোনো ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকারী কোনো ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দিতে পারবে। প্রবাসেই নাগরিকদের ভোটার করে কার্যক্রম কোভিড মহামারির আগে হাতে নিলেও তা আর এগিয়ে নিতে পারেনি ইসি। ফলে প্রবাসীদের দেশে এসেই ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় ছাড়াও কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকরা ভোটার হতে পারেন না। এই ধরনের সমস্যা দুর করতেই কমিশন এমন নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

এবারের হালনাগাদ কার্যক্রমে খসড়া তালিকা প্রকাশের পর বর্তমানে সংশোধন কার্যক্রম চলছে। চুড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ২মার্চ। এর আগে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অবঃ) দেশবাসী ও প্রবাসে যারা বসবাস করছেন তাদের বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, দেশের নাগরিকরা যাতে কোনো রকম বিড়ম্বনার মধ্যে না পড়ে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ইসি কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আমাদের যে নতুন চিন্তা বা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি তা বাস্তবায়নে প্রবাসী নাগরিকসহ দেশের সকল মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আমরা সবাই মনে করি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসে গিয়ে ভোটার হওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে অনলাইনে ২ হাজার ৫৫৩ জন আবেদন করেছেন। আগের কমিশন তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে প্রবাসীদের স্বপ্ন সহজে পূরণ হচ্ছে না। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মেয়াদে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রকল্পের আওতায় প্রবাসে নিবন্ধন টিম পাঠানো ও বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন সংক্রান্ত ব্যয় হিসেবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও তা থেকে মাত্র ৪ শতাংশ (৪ কোটি) টাকা ব্যয় করতে পেরেছিলো প্রকল্পে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তারা। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়া পরবর্তীতে কাজ শুরু করা না গেলে যায়নি, সেই টাকাও আর ব্যয় করা যায়নি।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মুক্ত আলোচনায় প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে তাদের এনআইডির বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় ৯০ লাখ নাগরিক (বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন কারণে তাদের অনেকে এনআইডি প্রস্তুত করতে পারেননি। এনআইডি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উপস্থিতি আবশ্যক। এটি প্রাপ্তি বা সংশোধনের জন্য প্রবাসীদের বাংলাদেশে আসতে হয়। ফলে তারা ভোগান্তির সম্মুখীন হন। তাই বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, সশোধন ও স্মার্টকার্ড দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। সে সময় প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন। পরে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, হালনাগাদে মৃত ভোটার কর্তন হয়েছে ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জন। মৃত ভোটার কর্তন করার পর দেশে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১১২ জন। মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৭৭ হাজার ২০৯ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। হালনাগাদের পূর্বে দেশে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০জন। হালনাগাদ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৭ জন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: