গৌরীপুরে স্কুলের পাশে ইটভাটা

প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম

সরকারি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার প্রভাবশালী ফসলি জমি থেকে শুরু করে বাসস্থানের পাশেও গড়ে তুলছেন অবৈধ ইটভাটা। বাদ যায়নি স্কুল, মাদ্রাসা এমনকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। জানা যায়, উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের ১৪৭ নম্বর সাবদুল সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে ইকো ব্রিক্স নামের ইটভাটা। রামগোপালপুর ইউনিয়নের ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে অবস্থিত ৪টি ইটভাটা।

সরেজমিন দেখা যায়, সাবদুল সরকার স্কুলটির সীমানা ঘেঁষেই সারি সারি রাখা হয়েছে কাঁচা ইট। জ্বলছে আগুন, পোড়ানো হচ্ছে ইট। মাটি, জ্বালানি, ইট বোঝাই ট্রাক একের পর এক যাওয়া আসা করছে। উচ্চ শব্দ, ধুলা আর ধোঁয়ায় একাকার চারিদিক। এর মধ্যেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও খেলাধুলা। আর রামগোপালপুর ইউনিয়নের ভাটাগুলো স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমি, স্কুল,মাদ্রাসা, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার ও লোকালয়ের পাশে।

স্থানীয়রা জানান, ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না ইটভাটার কার্যক্রম। পরিবেশ বিধ্বংসী ইটভাটাগুলোর কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসল, গাছপালা। ধোঁয়ার দাপটে জনজীবন এখন হুমকির মুখে। অন্যান্য স্কুল মাদ্রাসাগুলো দূরে থাকায় বাধ্য হয়ে সন্তানদের দূষিত পরিবেশেই পড়াতে হচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা স্থাপন করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি কামনা করেন সচেতন মহল।

সাবদুল সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ধোঁয়া, ছাই আর ধুলোবালিতে তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ক্লাস চলাকালীন ইটভাটার লরি ও ট্রাকের আসা-যাওয়ার বিকট শব্দে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

সাবদুল সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বলেন,শুধু পাশ ঘেঁষে ভাটা তৈরি করেছে এমন না, স্কুলের জমিও দখল করে রেখেছে ইটভাটার মালিক। বারবার তাদেরকে বলার পরও তারা আমাদের জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে না। কালো ধোঁয়া, পোড়ামাটির গন্ধ, ধুলা ময়লা তো আছেই, ইটভাটার কারণে বাচ্চারা অসুস্থ থাকে সবর্দা। তাই আমাদের পাঠদানে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমি গত ১২ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব পেয়েই আমি উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।

ইকো ব্রিক্স এর প্রোপ্রাইটর রাকিবুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কখনোই ইটভাটাকে লাইসেন্স দেয় না। লাইসেন্স ছাড়া ভাটা চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সিস্টেমটাই এমন, আমার একার দ্বারা সিস্টেম পরিবর্তন হবে না। তাই আমি একা আইন মানতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতে রাজি নই।

এস এসবি ব্রিকস এর মালিক সোহেল মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন গৌরীপুরে দুইটি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে, তন্মধ্যে আমারটা রয়েছে। তবে ক’দিন আগেই আমার লাইসেন্সটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। শিঘ্রই আমি নবায়ণ করে নেবো।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করার কারণে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা রয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনিন বলেন, আজকে বিষয়টি আমি জানতে পারলাম। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে দ্রত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের বিভাগীয় উপ-পরিচালক রুবেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, তথ্যটি আমার জানা ছিলোনা। অতি শিঘ্রই তদন্ত পুর্বক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: