গার্মেন্টস পণ্য চুরির টাকাতেই ২০ কোটি টাকার বাড়ি করেছেন শাহেদ

প্রায় ৫০ কোটি টাকা সমমূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্টস পণ্যসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্রের হোতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। চক্রটি গত দেড় যুগ ধরে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে আসছিল। চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করছিল সাঈদ।
র্যাব সূত্রে জানা গিয়েছে, গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে সাঈদ মৌলভীবাজার শহরে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি তৈরি করেছে। মৌলভীবাজারের দূর্লভপুরে প্রায় ২০ একর জমির উপরে মাছের খামারসহ বিশাল দুটি হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে তার। এছাড়াও বর্তমানে তার নিজস্ব চারটি কাভার্ডভ্যানসহ সহযোগীর আরও ১৫টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। সবমিলিয়ে অন্তত ৫০ কোটি টকার মালিক সাঈদ। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭-১৮টি গার্মেন্টস পণ্য চুরির মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলায় সে কারাভোগ করেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে আদালতে ছয়টি মামলার বিচারকাজও চলমান রয়েছে।
র্যাব সূত্রে আরো যায়, গাজীপুরের কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানে পোশাকের একটি চালান ব্রাজিলে রপ্তানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। পরের দিন ৮৯৮ কার্টন ভর্তি সোয়েটার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্রেতা-মনোনীত শিপিং প্রতিষ্ঠান এক লাখ ২৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের চালানটি গ্রহণ করে ব্রাজিলে পাঠায় এবং সে মোতাবেক বন্দর থেকে চালানবহনকারী জাহাজটি রওনা দেওয়ার পরপরই ক্রেতা পুরো অর্থ পরিশোধ করে। তবে গত ৬ জানুয়ারি ব্রাজিলের ক্রেতার কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যান গার্মেন্টস মালিকপক্ষ। সেখানে দেখা যায়, কিছু কার্টন সম্পূর্ণ খালি এবং অনেকগুলো কার্টন থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্য খোয়া গেছে। পরবর্তী সময়ে চুরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধ করতে হয় মালিকপক্ষকে।
পরবর্তীতে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ গত ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় চুরির ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করে। পরে চোরচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারসহ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার রাতে র্যাব-৪ পৃথক অভিযানে মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে আলোচিত ব্রাজিলে রপ্তানি করা গার্মেন্টস পণ্য চুরিসহ দেশের গার্মেন্টস পণ্য চুরি কাণ্ডের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে। গ্রেপ্তাররা হলো- মূলহতা শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা (৫২), মো ইমারত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও মো হৃদয় (২৮)। এসময় উদ্ধার করা হয় ব্রাজিলে রপ্তানির জন্য চুরি যাওয়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যান। গতকাল কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা এই গার্মেন্টস পণ্য চুরি জগতের মাস্টারমাইন্ড এবং এই চক্রের মূলহোতা ও নির্দেশদাতা। মূলত তার ছত্রছায়ায় ও সম্মতিতে দেশের প্রায় অধিকাংশ গার্মেন্টস পণ্য চুরি হয়। ৪০-৫০ জনের এ চক্রে রয়েছে অসাধু ড্রাইভার, হেলপার, গোডাউন মালিক, গোডাউন এলাকার আশ্রয়দাতা, অত্যন্ত দক্ষ কুলি সর্দারসহ একদল শ্রমিক। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ট্রান্সপোর্টে গার্মেন্টেসের মালামাল বহন শুরু করেন। গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার ও হেলপারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং অল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরির কাজে উৎসাহিত করে। প্রতিটি চুরির ঘটনার আগে ড্রাইভারদের মাধ্যমে বিদেশে রাপ্তানিকৃত গার্মেন্টস পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে চোরাই পণ্যের সম্ভাব্য বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হতো।
চক্রের মূল হোতা শাহেদের নির্দেশেই এসব হতো বলেও জানিয়েছে র্যাব। র্যাব জানায়, ব্রাজিলে রপ্তানি করা পণ্য চুরির ঘটনাও শাহেদের নির্দেশে হয়। গত বছরের ২৯ অক্টোবর গাজীপুর থেকে গার্মেন্টস পণ্য কাভার্ডভ্যানে লোড করে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কাভার্ডভ্যানে পণ্য লোডের পর গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ড্রাইভার শাহজাহানের কাছে স্যাম্পল হিসেবে কিছু সোয়েটার দেয়। ড্রাইভার শাহজাহান স্যাম্পল পাওয়ার পরপরই ছবি তুলে মোবাইলের মাধ্যমে মূলহোতা শাহেদের কাছে পাঠায়। শাহেদ স্যাম্পল পেয়ে এই চুরির ঘটনা বাস্তবায়নকারী আসামি তাওহিদুল ওরফে কাওছার ওরফে বড় কাওছারের কাছে পাঠায় এবং পণ্যের গুণগত মান ও বাজারমূল্য বিবেচনা করে এই চালানটিতে চুরির নির্দেশ দেয়। মাস্টারমাইন্ড শাহেদের নির্দেশে কাওছার ড্রাইভারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুরির মূল প্লট বাস্তবায়ন করে।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, গ্রেপ্তার শাহেদ চট্টগ্রামে থাকাকালে ১৯৯৬ সালে দুটি ট্রাক কিনে লোকাল ব্যাবসা শুরু করে এবং ২০০৪ সালে ট্রাক দুটি বিক্রি করে চারটি কাভার্ডভ্যান কিনে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন শুরু করে। সে কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার এবং হেলপারদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সহায়তায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির কার্যক্রমের জন্য একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র তৈরি করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সে নিজেই সশরীরে উপস্থিত থেকে চুরির কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: