সাভারে গোলাপ গ্রাম ফুল চাষীদের স্বপ্ন এখন ৩ দিবসকে ঘিরে

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গোলাপ ফুলের উৎপাদন হয়েছে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। তাই দীর্ঘ ২ বছরের ধকল কাটিয়ে এবার সাভারের বিরুলিয়া গোলাপ গ্রামের চাষিরা স্বপ্ন জয়ের আশা। করোনাকালীন সঙ্কট কাটিয়ে ওঠতে না ওঠতেই গত বছর গোলাপ গাছে লাগে মরক। ফলে চাষিরা আগে লোকসানে থাকলেও কয়েকমাসে ফুলের বাম্পার ফলন আর বাজারদর ভালো পেয়ে সব লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আশা চাষীদের। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি ও ২১ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের বাজার ধরতে।
সাভারের কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কমপক্ষে ২৮০ হেক্টর জমিতে সারা বছর বাণিজ্যিকভাবে গোলাপের চাষ হয়। তাই গোলাপগ্রাম নামেই খ্যাত বিরুলিয়া। এখানকার ফুল দিয়ে রাজধানীসহ আশপাশের জেলার বিয়ে, পূজা, ঈদ-পার্বণসহ বিভিন্ন আয়োজনের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয় পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুলের চাহিদার সঙ্গে দামও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাইতো গত দুই বছরের করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন ফুলচাষিরা।
কৃষকরা জানান, গোলাপগ্রাম এলাকার জমি উর্বর হওয়ায় প্রতিবছরই এ ফুলের বাম্পার ফলন হয়। তবে সার, কীটনাশক, বীজসহ নানা কৃষি উপকরণের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ফুলের উৎপাদন খরচ যথেষ্ট বেশি। কৃষি অধিদপ্তর ও সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা যদি কৃষি উপকরণের দাম কিছুটা কমাত, তাহলে কৃষকদের সুবিধা হতো।
পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করা স্থানীয় মনির হোসেন বিডি২৪লাইভ ডটকমকে বলেন, ২০২০/২১ এই দুই বছর করোনা আর গতবছর ফুলগাছে অজ্ঞাত ছত্রাক রোগের আক্রমণের কারণে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। তবে এবছর আগে থেকেই ছত্রাক প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আল্লাহর রহমতে গোলাপের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বেচাবিক্রিও বেশ ভালো, আমাদের এখানের ফুলের প্রচুর চাহিদা আছে এবং কাস্টমারও অনেক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দর্শনার্থীরা যারা এখানে ঘুরতে আসে তাদের কাছে আমরা খুচরা মূল্যে ফুল বিক্রি করে থাকি আর সন্ধ্যার পর আমাদের স্থানীয় ফুল বাজারে পাইকারি বিক্রি করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা ফুল চাষি তারা মূলত সারা বছর কয়েকটি বিশেষ দিবসের অপেক্ষায় থাকি। এই যেমন এই ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের তিনটি বিশেষ দিবস রয়েছে— পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস। বাগানভর্তি ফুল থাকায় এবার এই তিন দিবসে ইনশা আল্লাহ ভালো দামে ফুল বিক্রি করে গত বছরের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আশা করছি।
গোলাপ গ্রামে প্রতিদিনই নামে দর্শনার্থীদের ঢল। টাটকা গোলাপের আলতো ছোঁয়ায় মনকে সতেজ করতে রাজধানী শহর ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ছুটে আসেন এই গোলাপ গ্রামে। শহরের কাছাকাছি গ্রাম্য পরিবেশে গোলাপের ঘ্রাণ উপভোগ করতে অনেকেই আবার আসেন স্ব-পরিবারে। এত গোলাপ একসাথে দেখে উচ্ছ্বসিত তারা। তাইতো দিনভর পরিবারের প্রিয় সদস্যদের সাথে নিয়ে বাগান থেকে নিজ হাতে ফুল তুলে ফ্রেমবন্দী করতে ভুলছেন না দর্শনার্থীরা।
শরীয়তপুর থেকে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে আসা আঁখি বিডি২৪ লাইভ ডটকমকে বলেন, চারদিকে এত ফুল। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। আমরা প্রায়ই আসি এখানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে আর ঘুরতে। এখানে আসলেই আমি হাতভর্তি গোলাপ কিনি। দোকানের চেয়ে অনেক কমদামে ফুল পাওয়া যায় এখানে। সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস তাই সবাই আসবেন এখানে এবং নিজের প্রিয়জনকে ফুল কিনে উপহার দিবেন।
সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া, বিরুলিয়া, ভবানীপুর সংলগ্ন গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষ বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষে জড়িত। গ্রামগুলো বর্তমানে গোলাপের গ্রাম হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়ায় বসে ফুল বেচাকেনার হাট। সন্ধ্যা হতেই চাষিরা ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে আসে এই হাটে। এখান থেকে পাইকাররা ফুল কিনে নিয়ে যায় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নাজিয়াত আহমেদ বিডি২৪ লাইভ ডটকম কে বলেন, সাভারে গোলাপ গ্রামে ফুল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব সময় খোঁজ-খবর নেওয়াসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাজারে দেশীয় ফুলের চাহিদা আরও বাড়াতে বিদেশি কৃত্রিম ফুলের আমদানি কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকরা। এ বছর আড়াই কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি ভালো মুনাফার আশা ফুলচাষিদের।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: