কাদিয়ানীদের জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশ-মুসল্লী সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৫২ পিএম

পঞ্চগড় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ছালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ অবরোধ এবং পুলিশের সাথে বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। নিহত যুবক হলেন আরিফুর রহমান (২৭)। সে মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধূরী ইরান ধাওয়া পাল্টা ধাওযায় আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে কাদিয়ান সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলের মাহমুদ আহম্মেদ সুমন জানায় তাদের একজন নিহত হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে শুক্রবার (৩ মার্চ) জুম্মার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর পঞ্চগড় শহরে এসে বিক্ষোভ অবরোধ করেন, পরে একপর্যায়ে আহাম্মদ নগর এলাকায় কাদিয়ানীদের জলসা অভিমূখে মিছিল নিয়ে রওয়ানা দেয় মুসুল্লিরা। এসময় পঞ্চগড় চৌরঙ্গি মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। সেখান থেকে মুসুল্লিরা জেলা শহরে সিনেমা হল সড়কে পিছু হাটেন। তাৎক্ষণিক হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা একত্র হয়ে শহরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় জনতার ধাওয়ায় পুলিশ পিছু হাটেন। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।

এ সময় পুলিশ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়। বর্তমানে পঞ্চগড় শহরে দোকানপাট বন্ধ এবং থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে পুলিশ এলাকাবাসী ও বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষে জেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় । রাত অবধি দোকান পাঠ বন্ধ ছিল। বেলা ২ টার পর থেকে দফায় দফায় জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হাজার হাজার পথচারী ভোগান্তিতে পড়ে। শহরের বেশ কিছু বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাত অবধি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বিকেলে কাদিয়ান সম্প্রদায়ের আহম্মদনগড় মুসলিম জামাত এলাকার বাড়িগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক হামলা চালায় । হামলায় ২০ থেকে ২৫ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাদিয়েনের বাড়িতে হামলা চলছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শহরের ছোটছোট যানবাহন চলতে শুরু করে। রাত সাতটার দিকে শহরের করতোয়া সেতু সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতা আবারও জড়ো হয় বিক্ষোভ শুরু করেন। ব্যারিকেড দেয়।

এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে আগে থেকে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড় সহ বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু থেকেই পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশের সাথে বিজিবি র‌্যাবও অবস্থান নেয়। তবে বিক্ষুব্ধ জনতাকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্দ জনতা। দুপরের পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হামলা চলছেই। পঞ্চগড় সহ আশে পাশের কয়েকটি জেলার পুলিশ পঞ্চগড়ে বিক্ষুব্দ জনতাদের নিয়ন্ত্রনে অংশ নেয়।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রহিমুল ইসলাম জানান এই ঘটনায় ১৮ জন পুরুষ ভর্তি রয়েছে এছাড়াও ২৭ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যায় দুইজনকের রংপুর মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানান পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করতে বলা হয়েছে কাদিয়ানিদের। কাদিয়ানিরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন। তিনি বলেন মারা যাওয়ার বিষয়টি এখনো আমি নিশ্চিত না।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের জানায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: