পাল্টে যাবে ভাটি অঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রের পরিবেশ

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় জেলার কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মান কাজ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদারকি টিমের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের ৫৭৩ কোটি টাকার কাজ নিয়ে “তীর রক্ষা প্রকল্পে রক্ষা করবে কে” এবং “৫৭৩ কোটি টাকার কাজ নিয়ে ভানুমতির খেলা” শিরোনামে প্রথম শ্রেণী অনলাইন বিডি২৪লাইভ.কম এর মধ্যে সহ দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট জোনের প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদারকি টিম গঠন হয়। কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের
দেবে যাওয়া ব্লক ও প্রকল্প কাজে বড় বড় ফাটল মেরামত করা হয়েছে। এ বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশগত অনেক পরিবর্তন হবে সিলেট বিভাগের তিনটি জেলার হওরাঞ্চলসহ ভাটি এলাকার বিশাল পরিবর্তন হবে।
এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন-কুশিয়ারা ডাইক রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, ভাটি অঞ্চল রক্ষা পাবে অকাল বন্যার হাত থেকে,সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। প্রতি বছর অকাল বন্যায় তলিয়ে যেতে হাওরাঞ্চলের বোরো ফসল। এখন এই বাঁধ নির্মান হওয়ার ফলে রক্ষা পাবে বোরো ফসল সহ কৃষি জমি। প্রতি বছর শত শত ঘর বাড়ি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তো এখন আর নদী ভাঙ্গন হবে না। কুশিয়ারার তীর বর্তী মানুষের মধ্যে স্বস্থি নিঃস্বাশ ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট জোনের প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদারকি টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীণ নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বেশকিছু স্থান দেবে ফাটল দেখা দিলে এ প্রকল্প নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি বৃদ্ধি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি রোধ করছে। প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্লক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ও ব্লক দেবে যাওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
জানা যায়- হবিগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ “কুশিয়ারা ডাইক” প্রতি বছর বর্ষায় ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, সিলেটের ওসমানী নগর ও মৌলভীবাজার সদর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামসহ ভাটি ও হওরাঞ্চলের বাড়িঘর ও কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায় পানির নীচে। নদীর উভয় তীরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল বর্তমান প্রযুক্তিতে নতুন ভাবে কুশিয়ারা উভয়পাশে বাঁধ নির্মাণের জন্য।
সেই দাবির প্রেক্ষিতে ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যায়ে উভয় তীরে প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ব্লক দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করা হয়েছে। প্রতি বছরে এমন বিধ্বংসী ভাঙন রোধে ও অকাল বন্যা থেকে রক্ষা পেতে জাতীয় সংসদে কুশিয়ারা উভয় তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ও ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণের জোর দাবী জানান হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ। সংসদ সদস্যের দেয়া বক্তব্য দৃষ্টিগোচর হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। তিনি সরজমিন পরিদর্শন করে সরজমিন প্রতিবেদন দিলে কুশিয়ারা ডাইক রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের জন্য একনেকে প্রকল্প পাস হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকায়জুড়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মানে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দরপত্র আহবানের কাজ পায় ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, সে গুলো হলো, গোলাম রব্বানী কন্টাকশন,এএইচ ট্রেডিং কোং,আরএফএল,নেশন ট্রেক কমিশন ও আবুল কালাম কোং। তারা ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেসমূহের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে ট্রেডিং কোং, আরএফএল ও হাজী আতাউর রহমান ট্রেডিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরএফএল এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তারা কাজের সংশোধন করে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছেন। তিনি বলেন আমাদের কাজ সরকারী নীতি মালা অনুযায়ী হচ্ছে এতে কোন ব্যতিক্রম হয়নি।
গোলাম রব্বানী কন্ট্রাকশনের কাজ চলছে, তাদের প্রকল্প সুপার ভাইজার প্রকৌশলী শাহেদ আহমদ বলেন, আমরা কাজের সম্পূর্ন গুনগত মান বজায় রেখে করছি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা প্রতিদিন তদারকি করছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, সাবেক মেম্বার দুলাল আহমদ জানান, নবীগঞ্জের পাহাড়পুর অংশে এ এইচ ট্রেডিং করপারেশন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ব্লক নির্মান করছেন। সেখানে গুণগত মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হলেও সিমেন্টের তুলনায় মরা পাথর, অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যারা বিষয়টি সমাধান করেন।
এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক ট্রেডিং, আরপিএল ট্রেডিং করপোরেশন কাজ নিয়ে লামা তাজপুর এলাকার রব্বান উল্লাহ, আলী হোসেন রানা ও খালিক মিয়ার বাড়ির সামনেসহ বেশ কিছু স্থানে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ নিয়ে বলেন, আমরা নদীর ভাঙ্গন নিয়ে আতংকের মধ্যে থাকতাম। প্রতি বছর বর্ষায় আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে যেতো এখন আর আমাদের সেই চিন্তা নেই। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতি পাল্টে দিবে।
শেরপুর বনগাও এলাকার মেম্বার সুজন মিয়া বলেন- বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণ সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ । প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আমাদের কৃষিক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন আসবে। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বোরো ফসল নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। অল্প বৃষ্টি হলেই কুশিয়ারা পানি এখন আর ফসল তলিয়ে নিতে পারবে না। তাই আমরা এই প্রকল্প নিয়ে সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। পাহাড়পুর এলাকার মনর আলী জানান- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লক নির্মাণ করে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসেন সবকিছুই দেখেন কিন্তু প্রথমে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই, মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও অফিসাররা এখন ভালোই কাজ করছেন এই জন্য মিডিয়াকে
ধন্যবাদ জানাতে চাই।
নবীগঞ্জ উপজেলা আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরিষদের চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন বলেন- ব্লক নির্মাণে অনিয়ম দুর্র্নীতির বিষয়ে তড়িৎগতি কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কুশিয়ারার তীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম ও কয়েক হাজার একর ফসলী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।
হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে হাওরাঞ্চলের পরিবেশ পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। শুধু নদী ভাঙ্গনই রোধ হবে না,কৃষিক্ষেত্রে রক্ষা পাবে বোরো ফসল, অকাল বন্যারোধ হবে। সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ উপকৃত হবেন কুশিয়ারা ডাইকের তীর রক্ষা প্রকল্পের জন্য তাই সরকারে এই প্রকল্পকে স্বাগত
জানাচ্ছি। বন্যায় ডুবেছে সিলেটসহ বানভাসি মানুষের কষ্ট লাগবে কাজ করবে। অথচ পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কুশিয়ারা ডাইক সঠিক ভাবে সম্পন্ন হলে জনগনের উপকারে আসবে।
হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন, কুশিয়ারা তীর রক্ষা প্রকল্পের ব্লক নির্মাণে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। তদারকি জন্য একটি টিম কাজ করছে। আমি নিজেও কাজের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছি। বিশেষ করে পাহাড় থেকে মাটি কাটা, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা;কুশিয়ারা তীর রক্ষা; প্রভৃতি দূষণের উৎসগুলো আটকানো দরকার। এই প্রকল্প পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী একে এম শহিদুল ইসলাম বলেন- কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ ১১টি প্যাকেজের মধ্যে ৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙনরোধে করা হচ্ছে না। পরিবেশগত উন্নয়ন হবে।সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মানুষ কুশিয়ারার তীর রক্ষা প্রকল্পের উপকার ভোগ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও দূষণ মরুকরণ ও খরা- বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য বিশাল হুমকি। তাই কুশিয়ারা ডাইক তীর রক্ষা প্রকল্প এবিষয়ে উন্নত ভুমিকা রাখবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: