উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে রাজধানীর বায়ুদূষণ

রাজধানী ঢাকার বাতাস ক্রমাগত দূষণের সকল মাত্রা ছাড়িয়েছে। পরিণত হয়েছে খুবই অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বাতাসের শহরে। বিগত কয়েক মাস থকেই পৃথিবীর দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে ওঠা-নামা করছে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা। বছরজুড়ে একদিনের জন্যও নির্মল বায়ুতে প্রাণভরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না এই ম্যাগাসিটির বাসিন্দারা। ঘনঘোর বর্ষাকালে কিছুটা সহনীয় মাত্রা পায় বাতাস। তবে কুয়াশা-শীতের মৌসুম এলে বায়ুদূষণ ভয়ংকর হয়ে ওঠে। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
টানা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দূষিত শহরের তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে কয়েকটি শহরের মাঝে রয়েছে ঢাকা। গত এক মাসে একদিনও সহনীয় বাতাস পায়নি রাজধানীবাসী। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ মানুষের শরীরে অনেক ধরণের রোগ তৈরি করে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর। বায়ু দূষণ কমানো না গেলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, যার মাসুল দিতে হবে সবাইকে।
এছাড়া বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শনিবার (১১ মার্চ) ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। সকাল ১০টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৯১ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ইরাকের বাগদাদ ২১৫ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষ আছে। আর পাকিস্তানের লাহোর বিশ্বে বায়ুদূষণের দ্বিতীয়, স্কোর ১৯৪। বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকার অবস্থান ছিল নবম।
এছাড়া শনিবার (১১ মার্চ) সকাল ১০টায় ১৯১ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণের চতুর্থ স্থানে আছে থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই। পঞ্চমে ভারতের নয়াদিল্লি স্কোর ১৮৯, ছয়ে থাকা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর স্কোর ১৮৩, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের স্কোর ১৮৩। ঢাকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারিতে মোট ৯ দিন রাজধানীর বায়ুর মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ধারা এখনো অব্যাহত।
বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে শ্যামলীর বক্ষব্যাধি সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার শিল্পী সম্প্রতি গনমাধ্যমে জানিয়েছেন , বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ধূলিকণা থাকে; এসবের পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখন বায়ু দূষণ হয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। এসব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মাধ্যমে ফুসফুসে যাচ্ছে। এতে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রক্তের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে চলে যাচ্ছে। বায়ু দূষণের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। দীর্ঘদিন ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশের ফলে ফুসফুস, কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ পতঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে যায় এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়।
একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। আর ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।
এছাড়া নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি—বছরের চার মাস ঢাকার বায়ু বেশি দূষিত থাকে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে বায়ুর মান থাকে সবচেয়ে বেশি খারাপ।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: