চোর সন্দেহে দিনমজুরকে নির্যাতন, গ্রেফতার ৫

বাগেরহাটের মোল্লাহাটে চোর সন্দেহে দিন মজুর শেখ মনিরুজ্জামানকে (৪২) অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোল্লাহাট থানা পুলিশ এদের আটক করে। এর আগে নির্যাতনের শিকার শেখ মনিরুজ্জামানের বড় ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামী করে মোল্লাহাট থানায় মামলা দায়ের করেন।
আহত শেখ মনিরুজ্জামান উপজেলার পূর্ব দারিয়ালা গ্রামের প্রয়াত ইসলাম শেখের ছেলে। ভূমিহীন হওয়াতে গাংনী মাতারচর আশ্রয়ন প্রকল্পে সরকারের দেওয়া একটি ঘরে থাকন তিনি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মোল্লাহাট উপজেলার ঘোষগাতি এলাকার হেকমত শেখের ছেলে আরিফুল শেখ (২৬), আব্দুল হালিম শেখের ছেলে আব্দুল গনি শেখ(৩৫), আহমদ শেখের ছেলে আলমাস শেখ(২৭), নগরকান্দি এলাকার সিদ্দিক শেখের ছেলে মাহমুদ শেখ(২৮), লায়েক শেখের ছেলে আকাশ শেখ (২৭)। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দের প্রস্তুতি চলছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১১ মার্চ মোল্লাহাট উপজেলা পশু হাসপাতালে ছাগলের চিকিৎসা করে বাড়ি ফিরছিলেন দিনমজুর শেখ মনিরুজ্জামান। ঘোষগাতি এলাকায় মোবারকের দোকানের সামনে পৌঁছালে মনিরুজ্জামানের পথ আটকে কিছু লোক তাকে বেধড়ক মারধর করে। লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। মনিরুজ্জামান চিৎকার করলে তাদের নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নির্যাতনকারীরা মারধর ও মনিরুজ্জামানের চিৎকারের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরবর্তীতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে দেন।
নির্যাতনের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মনিরুজ্জামানকে ভ্যান থেকে নামিয়ে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে একটি গামছা দিয়ে দুই হাত বাঁধছেন এক ব্যক্তি। পরক্ষনে আরও কয়েকজন এসে লাঠি দিয়ে মারতে মারতে তাকে মাটিতে শুয়িয়ে ফেলে। বার বার কাঁদতে কাঁদতে তিনি চোর না বলে তাদের কাছে আকুতি করতে থাকেন। কেউ তার কথা না শুনে মারতে থাকে। পরে কয়েকজন এসে তার পাও বেঁধে দেয়। অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আরও নির্মম ভাবে আঘাত করতে। বাঁধা অবস্থায় হাত, পা ও পিঠে আঘাত করতে করতে একজন হাপিয়ে গেলে আরেক জন এসে মারছেন। মার খেতে খেতে জ্ঞান হারালেও তাকে মারতে থাকনে তারা। যারা মারছিলেন পাশে থাকা ব্যক্তিরা তাদের উপুর করে, সোজা করে, পায়ে, তালুতে মার বলে নির্দেশনা দিতে শোনা যায়। জ্ঞান ফিরলে কয়েকজন জড় হয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তখন ছাগল চুরির পাশাপাশি এলাকায় গরু চুরির ঘটনায়ও তাকে অভিযুক্ত করতে শোনা যায়।
আহত শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, একটা ছাগলের বাচ্চা নিয়ে আমি আর আমার এক চাচা জাহিদ আসছিলাম মোল্লাহাট পশু হাসপাতালে। সেখান থেকে ট্রিটমেন্ট করায়ে ফিরে যাওয়ার পথে ছাগলের মালিক জাহিদ চাচাকে রানিং (ভ্যান চলন্ত) অবস্থায় একটা বাড়ি দেয়। ওই বাজারের ওখানে কয়েকজন আগে থেকে দাড়ানো ছিলেন। পরে আরও লোক জড়ো হয়। বাড়ি দিলে সে (জাহিদ) দৌড় দেয়। তখন তারা বলে সে চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে। পরে লোকজন জড়ো হলে আমারে মারধর করে। আমি কাজ করি। আমাকে মিথ্যে চোরের অভিযোগ দিয়ে প্রচুর মারিছে। মারতি মারতি অনেকগুলো লাঠি ভাঙিছে আমার গায়। আমি জ্ঞান হারায় ফেলে ছিলাম। সেখানে লোক ছিল প্রচুর, প্রায় ৪০-৫০ জন। কিন্তু মারছে তিন চারজনে। সবাইরে চিনি না। আমি বারে বারে হাতে পায়ে ধরে বলছি, আমারে মারার আগে একটু যাচাই করে নেও। আমি চোর না, কেই কোন কথাই শুনি নি। আমি শুধু শুধু মারছে।
মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. নাহিদুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনির শিকার এক ব্যক্তিকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীর ছুড়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে কোথাও ক্ষত নেই, সবই ব্লাংক হুইপেনের (লাঠিজাতীয় কিছু) আঘাত। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এস, এম আশরাফুল আলম বলেন, দিনমজুরকে নির্যাতনের মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অর্যাহত রয়েছে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: