প্রায় ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি চালাচ্ছিল চালক

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৩, ১১:১৭ এএম

সাত মাস আগে জাহিদ হাসান (৪০) ইমাদ পরিবহনে চালক হিসেবে যোগ দেন। টানা ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন তিনি। মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস দুর্ঘটনায় চালকসহ ২০ যাত্রী নিহত হন। চালক ক্লান্ত শরীরে চোখে ঘুম নিয়ে অতিরিক্ত গতিতে বাস চালানোর জন্য এতো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

জাহিদ হাসান বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ঢাকার দোলাইরপাড়ের বাসা থেকে বের হন। ওই দিন রাতেই যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ে যান পিরোজপুরে। পরের দিন শুক্রবার সকালে পিরোজপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকেলে আবার যাত্রী নিয়ে ছুটে যান পিরোজপুরে। রাতে পিরোজপুর পৌঁছে পরের দিন শনিবার সকালে আবার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। ঢাকা থেকে শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে আবার ছুটে যান খুলনায়। রাতে বাসের মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে রবিবার (১৯ মার্চ) ভোর চারটায় খুলনার ফুলতলা থেকে বাসটি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এভাবে তিনি গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বাস চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

রবিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে জাহিদের ছেলে রাতুল হাসান বাবার লাশ শনাক্ত করার জন্য শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাবা সপ্তাহে এক দিন বাসায় আসার সুযোগ পান। গাড়ি চালিয়ে তিনি সব সময় ক্লান্ত থাকেন। বৃহস্পতিবার বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা, পিরোজপুর, খুলনা রুটে পাঁচটি ট্রিপে বাস চালিয়েছেন। বাবা শনিবার রাতে ফোনে জানান, তিনি খুব ক্লান্ত ছিলেন। রবিবার (১৯ মার্চ) ঢাকায় ফিরে বাসায় এক দিন বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাবা আমাদের ফাঁকি দিয়ে চির বিশ্রামে চলে গেলেন।’

চালকদের ব্যস্ত সূচি ও বিশ্রামের ঘাটতির বিষয়ে ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির বাস যারা চালান, তাদের বিশ্রামের জন্য প্রতিটি জায়গায় আমাদের ঘর রাখা আছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির চালক জাহিদ ক্লান্ত ছিলেন, তিনি এমন কথা আমাদের কাউকে জানাননি।’

চালকের ক্লান্তির বিষয়ে শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চালক কোনো রকম বিশ্রাম না নিয়ে বাসটি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ সময় বাস চালানোর কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সকাল সকাল ঘুম ঘুম চোখে বাস চালানোয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি।’

উল্লেখ্য, চালক জাহিদ হাসান ইমাদ পরিবহনের বাসটি নিয়ে গতকাল ভোরে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে তার বাসটি। এতে তিনিসহ ২০ যাত্রী নিহত হন। ক্লান্ত দেহে ঘুমচোখে অতিরিক্ত গতিতে বাস চালানোর কারণে এত প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। জাহিদ হাসানের ছেলেও জানিয়েছেন, টানা বাস চালিয়ে তার বাবা ক্লান্ত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: